কুয়েত অর্থনৈতিক ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম একটি তেল সমৃদ্ধ দেশ। এছাড়াও পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুদ্রা মানের দেশ হলো কুয়েত। যে কারণে একটি ভালো বেতনের আশায় বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বহু বাংলাদেশি কর্মী কুয়েত পাড়ি জমাচ্ছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের এই তেলসমৃদ্ধ দেশটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। তবে বাংলাদেশ থেকে যারা কুয়েতে যান তাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না কুয়েতে কোন কোন কাজের চাহিদা বেশি, কোন ধরনের কাজের ভিসা বেশি ইস্যু হয় করা হয় এবং কোন ধরনের কাজে জন্য তারা উপযুক্ত।
যার প্রেক্ষিতে এই পোস্টে আমরা কুয়েতে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন কাজগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জাননোর চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুন: কসোভো বেতন কত ২০২৫
কুয়েতে কেন বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বেশি?
কুয়েতের নির্মাণ, সেবা ও গৃহস্থালী খাত অনেকটাই প্রবাসী শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল। উন্নয়ন প্রকল্প, হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে ব্যবসা, গৃহস্থালী কাজ সহ সব ক্ষেত্রেই দক্ষ, অভিজ্ঞ ও পরিশ্রমী শ্রমিক প্রয়োজন। বাংলাদেশি কর্মীরা সাধারণত অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুটা কম বেতনই কাজ করতে সম্মত থাকেন।
পাশাপাশি তারা অন্যান্য দেশের কর্মীদের তুলনায় যথেষ্ট পরিশ্রমী হয়ে থাকেন। যার ফলে কুয়েতের নিয়োগদাতারা তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় বাংলাদেশি কর্মীদের উপরের দিকেই রেখে থাকে।
আরও পড়ুন : সার্বিয়া কেমন দেশ ২০২৫
কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি:
বর্তমানে কুয়েতে প্রায় ৩ লক্ষেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী কর্মরত রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই সাধারণ শ্রমিক ও সেবা খাতের সাথে যুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশ ও কুয়েত সরকারের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা আওতায় বাংলাদেশি কর্মীরা বৈধভাবে সহজেই কুয়েতে গিয়ে কাজ করতে পারেন।
সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন কাজগুলো হচ্ছে নির্মাণ শ্রমিক, ক্লিনার, হাউজ ড্রাইভার, গৃহকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী এবং হোটেল-রেস্টুরেন্ট স্টাফ ইত্যাদি। এর পাশাপাশি দক্ষ এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের জন্য টেকনিক্যাল কাজ গুলোরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
আরও পড়ুন: সাইপ্রাস বেতন কত ২০২৫
কন্সট্রাকশন/নির্মাণ শ্রমিক:
কুয়েতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা কন্সট্রাকশন শ্রমিকদের। বর্তমানে কুয়েতের বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পে বড় বড় বিল্ডিং, রাস্তা, ব্রিজ, ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সেখানে বহু দক্ষ এবং অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। কুয়েতে এ ধরনের কাজের জন্য সাধারণ শ্রমিক, মেসন, স্টিল ফিক্সার, রডবাঁধাইকারী, প্লাম্বার, ইলেট্রিশিয়ান ইত্যাদি পদের বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত কর্মী নেওয়া হয়।
- বেতন: মাসে ৮০–১২০ কুয়েতি দিনার (অতিরিক্ত ওভারটাইম আলাদা)
- যাদের জন্য উপযুক্ত: অদক্ষ বা আধা-দক্ষ শ্রমিক।
- অন্যান্য সুবিধা: থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রি।
- ভিসা টাইপ: General Worker / Construction লাবরের
ক্লিনার বা পরিছন্নতাকর্মী:
কুয়েতে হাসপাতাল, হোটেল, শপিং মল বা অফিস, আবাসিক বিল্ডিং সব জায়গায় ক্লিনারদের ব্যাপক চাহিদা আছে। যে কারণে কুয়েতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব কাজে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। এধরনের কাজকে অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য অন্যতম সেরা সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- বেতন: মাসে ৭০–১০০ কুয়েতি দিনার।
- যাদের জন্য উপযুক্ত: অদক্ষ শ্রমিক।
- অন্যান্য সুবিধা: থাকা ও খাবার ফ্রি।
- ভিসা টাইপ: Cleaning Staff
হাউজ ড্রাইভার (বাড়ির গাড়িচালক):
যেসব বাংলাদেশি কর্মীরা ড্রাইভিং জানেন এবং বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তাদের কুয়েতে হাউজ ড্রাইভারের হিসাবে বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। একাজে সাধারণত পরিবারিক বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাড়ি চালানো, শিশুদের স্কুলে আনা-নেওয়া ইত্যাদি কাজ করতে হয়। এছাড়াও কোম্পানি ড্রাইভার হিসাবেও বাংলাদেশি ড্রাইভারদেএ বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। তাই যারা ড্রাইভিং জানেন এবং আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে, কুয়েতে তাদের জন্য ড্রাইভারের কাজ ভালো বেতনের একটি অন্যতম সুযোগ।
- বেতন: মাসিক ১২০–১৮০ কুয়েতি দিনার (মালিক ও কাজের ধরনভেদে)।
- যাদের জন্য উপযুক্ত: দক্ষ শ্রমিক।
- অন্যান্য সুবিধা: থাকা ও খাওয়ার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রি।
- ভিসা টাইপ: House Driver / Company ড্রিভের
ডোমেস্টিক হেল্পার (গৃহকর্মী):
বাংলাদেশি নারী কর্মীদের জন্য কুয়েতে ডোমেস্টিক হেল্পার বা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। বাংলাদেশি নারী কর্মীদের মধ্যে গৃহকর্মীর ভিসা সবচেয়ে বেশি ইস্যু হয়। এ কাজের চাহিদাও অনেক৷ তবে এই ধরনের কাজে যাওয়ার আগে যাচাই-বাছাই ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ভালো এজেন্সি বেছে নেওয়াও জরুরি।
- বেতন: মাসিক ৭০–১০০ কুয়েতি দিনার।
- যাদের জন্য উপযুক্ত: অদক্ষ শ্রমিক
- অন্যান্য সুবিধা: থাকা ও খাওয়ার ফ্রি।
- ভিসা টাইপ: Maid / Domestic Helper
সিকিউরিটি গার্ড:
বিভিন্ন অফিস, আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য গার্ড প্রয়োজন হয়।কুয়েতে সাধারণ সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি কর্মীদের গার্ড হিসাবে নিয়োগ দিয়ে থাকে। শারীরিক ফিটনেস এবং কিছু প্রশিক্ষণ থাকলে সহজেই এ ধরনের কাজের ভিসা পাওয়া যায়।
- বেতন: মাসিক ১০০–১৩০ কুয়েতি দিনার
- যাদের জন্য উপযুক্ত: আধা-দক্ষ শ্রমিক
- শর্ত: উচ্চতা ও শারীরিক ফিটনেস
- অন্যান্য সুবিধা: থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্রি।
- ভিসা টাইপ: Security গুয়ারদ
রেস্টুরেন্ট ও হোটেল স্টাফ:
সাম্প্রতিক বছর গুলোতে কুয়েতে রেস্টুরেন্ট ও হোটেল খাতে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বাড়ছে। এর মধ্যে কিচেন হেল্পার, ওয়েটার, ক্লিনার, বাবুর্চি বা কুকের কাজগুলো বেশি জনপ্রিয়। ওয়েটার, কিচেন হেল্পার, বাবুর্চি, কুক এই ধরনের কাজের জন্য বাংলাদেশি কর্মীদের এখন নিয়মিত নিয়োগ দেওয়া হয়। যাদের হসপিটালিটি বা কিচেনের অভিজ্ঞতা আছে, তারা এক্ষেত্রে বেশি সুবিধা পেয়ে থাকেন।
- বেতন: মাসিক ৯০–১৫০ কুয়েতি দিনার।
- যাদের জন্য উপযুক্ত: দক্ষ ও অদক্ষ উভয়ই (কাজভেদে)
- অন্যান্য সুবিধা: থাকা ও খাওয়ার ফ্রি।
- ভিসা টাইপ: Hospitality Staff
ইলেকট্রিশিয়ান ও টেকনিশিয়ান:
যাদের কোনো টেকনিক্যাল ট্রেনিং আছে, যেমন ইলেকট্রিক কাজ, এসি মেরামত, বা মেকানিক্যাল কাজ তাদের জন্য কুয়েতে উচ্চ বেতনের চাকরি অন্যতম খাত হলো এটি। কুয়েতে ইলেকট্রিশিয়ান ও টেকনিশিয়ানদের ব্যাপক চাহিদা। তবে তার জন্য ভালো কাজ জানা আবশ্যক।
- বেতন : মাসিক ১৩০–২০০ কুয়েতি দিনার
- যাদের জন্য উপযুক্ত: দক্ষ শ্রমিক
- অন্যান্য সুবিধা: থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফ্রি।
- ভিসা টাইপ: Skilled Technician / Electrician
এছাড়াও যারা অদক্ষ শ্রমিক, তারা শুরুতে সাধারণ শ্রম বা পরিষেবা খাতে কাজ শুরু করে ভবিষ্যতে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ভালো অবস্থানে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন: কিরগিজস্থান গার্মেন্টস বেতন কত ২০২৫
শেষ কথা:
কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য নির্মাণ, ক্লিনার, ড্রাইভার, গৃহকর্মী ও সিকিউরিটির মতো কাজগুলোর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আপনি যদি দক্ষ হন, তাহলে কুয়েতে আপনার দক্ষতা অনুসারে আরও ভালো বেতনের চাকরি ও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। আর যদি অদক্ষ হন, তবুও কিছু নির্দিষ্ট খাতে অদক্ষ কর্মীদের ভালো চাহিদা রয়েছে। কুয়েত কোন কাজের চাহিদা বেশি তা নিয়ে এই ছিলো মোটামুটি আমাদের আলোচনা।