সার্বিয়া দেশ কেমন? এখন সার্বিয়া যাওয়া কি ঠিক হবে?

This Template Designed By E10Script

সার্বিয়া বলকান উপদ্বীপের মধ্যভাগে অবস্থিত একটি দেশ। ভৌগোলিক ভাবে অত্যন্ত সুন্দর একটি দেশ সার্বিয়া। অর্থনৈতিক ভাবেও দেশটি উচ্চ মধ্য আয়ের একটি দেশ। তাই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার অন্যতম একটি গন্ত্যব্য হচ্ছে সার্বিয়া। তবে যারা সার্বিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বা বিভিন্ন এজেন্সিকে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন কিংবা ওয়ার্ক পারমিটের পর ভিসার জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের মধ্যে সার্বিয়া বেশ কিছু প্রশ্ন ঘোরা ফেরা করছে। এই আলোচনার আমরা আপনাদের সে প্রশ্ন গুলোই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো৷ চেষ্টা করবো, সার্বিয়া দেশ কেমন? সেখানকার কর্ম পরিবেশ কেমন, ভিসা রেশিও কেমন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে। 

আরও পড়ুন: 

সার্বিয়া দেশ কেমন

সার্বিয়া কেমন দেশ? 

বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা কিংবা কাজের জন্য কোন দেশে পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশেটি কেমন হবে তার জন্য বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ৷ শুধুমাত্র আমেরিকার মহাদেশ বা ইউরোপ মহাদেশ দেখেই চোখ বন্ধ করে সে দেশে যাওয়াটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

সেকারণে সার্বিয়া যাওয়ার পূর্বে সামগ্রিক ভাবে দেশ হিসাবে বাংলাদেশিদের জন্য সার্বিয়া কেমন হবে তার একটি চিত্র এখানে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। সেখানে ভৌগোলিক অবস্থান থেকে শুরু করে, কর্ম পরিবেশ, বেতন কাঠামো, জীবন যাত্রায় ব্যয়, অন্যান্য দেশে যাওয়ার সুযোগ সহ খুটিনাটি সকল বিষয়ে আলোকপাত করা হবে। যাতে সার্বিয়া দেশটি কেমন এই সিদ্ধান্ত নিতে আপনার সুবিধা হয়।

সার্বিয়া কোন মহাদেশে অবস্থিত?

ভৌগোলিক ভাবে সার্বিয়া মধ্য ইউরোপের স্থল বেষ্টিত একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। অবস্থানগত দিক থেকে সার্বিয়া ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত। সার্বিয়ার অন্যতম প্রতিবেশি রাষ্ট্র হলো, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, উত্তর মেসিডোনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং মন্টিনিগ্রো। 

সার্বিয়া কি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত?

বাংলাদেশিদের ইউরোপের কম উন্নত দেশ গুলোতে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো সেখান থেকে সেন্ট্রাল ইউরোপের দেশ গুলো কোন ভাবে প্রবেশ করা। যার অন্যতম একটি বৈধ্য মাধ্যম হলো প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত বা শেনজেন ভুক্ত কোন দেশে যাওয়া। পরবর্তীতে সেখান থেকে মূল ইউরোপের কোন দেশে প্রবেশ করা। তাই ভৌগোলিক ভাবে কোন দেশ শুধুমাত্র ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত এটিই গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত বা শেনজেন ভুক্ত কিনা সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই ক্ষেত্রে একটি দুঃখের বিষয় হচ্ছে সার্বিয়া ভৌগোলিক ভাবে ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত বা শেনজেন ভুক্ত কোন দেশ হয়। তবে দেশটি ২০১৪ সাল সাথে ২০২৫ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হাওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

সার্বিয়া কি সেনজেন হবে?

সার্বিয়া কি সেনজেন হবে

ইউরোপের দেশ সার্বিয়া এখন পর্যন্ত সেনজেন ভুক্ত কোন দেশ না। সে কারণ আপনি চাইলেই এখান থেকে একই ভিসায় ইউরোপের কোন দেশে সহজেই যেতে পারবেন না। তবে সার্বিয়া প্রতিবেশী সেনজেন ভুক্ত দেশ হলো বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া। তাই আশা করা যায় সার্বিয়া দ্রুত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হতে পারলে আগামী ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যেই দেশটি শেনজেন ভুক্ত দেশ হয়ে যাবে। এ বিষয়ে আরো বিস্তারি জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন: সার্বিয়া কি সেনজেন হবে ২০২৫

সার্বিয়ার কর্মপরিবেশ এবং বেতন কেমন?

একটি দেশ কেমন সেটি বহুলাংশে নির্ভর করে দেশটির কর্ম পরিবেশ কেমন তার উপর। সার্বিয়া এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা শেনজেন ভুক্ত না হাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়ার ভিসা রেশিও শেনজেন ভুক্ত অন্যন্য দেশ গুলোর তুলনায় বেশ ভালো। আপনার হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন রোমানিয়া শেনজেন ভুক্ত হওয়ার আগে সেখানকার ভিসা পাওয়া কিছুটা সহজ থাকলেও বর্তমানে রোমানিয়া ভিসা পাওয়া বেশ জটিল। এবং সেখানে যাওয়ার খরচও বর্তমানে অনেক। 

তুলনামূলক ভাবে সার্বিয়া শেনজেন ভুক্ত না হওয়ায় সেখানে ৬ লক্ষ থেকে ৭ লক্ষ টাকার মধ্যেই যাওয়া যায়। এবং এখন পর্যন্ত ভিসা রেশিও তুলনামূলক ভাবে যথেষ্ট ভালো। তাই ইউরোপের কোন দেশে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে ইউরোপের অন্যতম একটি গন্তব্য হতে পারে সার্বিয়া। 

আরও পড়ুন: সার্বিয়া যেতে কত টাকা লাগে ২০২৫

এখন সার্বিয়ার কর্মপরিবেশ নিয়ে কিছু বলা যাক। সার্বিয়ায় সাধারণ দক্ষ অদক্ষ উভয় ধরনের শ্রমিকেরই চাহিদা রয়েছে৷ এখানের কর্ম ঘন্টা হচ্ছে সপ্তাহে ৫ দিন। এবং দিনে ৮ ঘন্টা। অর্থাৎ ওয়ার্কিং আওয়ার হচ্ছে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা। আর সাপ্তাহিক ছুটি বাদেও বাৎসরিক ছুটি পাবেন ২০ দিন। এছাড়াও প্রথম ৩ মাসের মধ্যেই কোম্পানি থেকে টিআরসি কার্ড করে দিবে। এবং সার্বিয়া ৩ বছর থেকে ৫ বছর অবস্থান করলে পিআর কার্ড পায়ে যাবে। তখন এটি দিয়েই বৈধ্য ভাবে যে কোন সেঞ্জেনভুক্ত দেশে যেতে পারবেন।

সার্বিয়া বেতন কত

এবার বেতন নিয়েও কিছু আলোচনা করা যাক। সার্বিয়ার বেতন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত কিংবা সেনজেন ভুক্ত দেশ গুলোর তুলনায় কিছুটা কম বললেই চলে। সার্বিয়াতে ভালো কোম্পানি গুলোতে স্কিল ওয়ার্কারদের বেতন সাধারণত ৬০০ থেকে ৭০০ ইউরো এর মধ্যেই হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭৫ হাজার টাকা ৮৮ হাজার টাকা। আর অদক্ষ বা নতুন ওয়ার্কারদের বেতন ৪৫০ ইউরো থেকে ৫০০ ইউরোর মধ্যে হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৬ হাজার টাকা ৬৩ হাজার টাকা। সার্বিয়াতে থাকা খাওয়ার খরচ সাধারণ কোম্পানিই বহন করে থাকে। 

আরও পড়ুন: গ্রিক সাইপ্রাস বেতন কত ২০২৫

সার্বিয়া ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?

আমরা উপরে সার্বিয়ার বেতন হিসাবের সুবিধার জন্য ইউরোতে দেখালেও সার্বিয়ায় প্রচলিত স্থানীয় মুদ্রা কিন্তু ইউরো নয়। সার্বিয়ার স্থানীয় মুদ্রার নাম হলো সার্বিয়ান ডিনার (RSD)। তবে মতো মজার বিষয় হলো সার্বিয়া ইউরোপের দেশ হলেও সার্বিয়ার ১ টাকা বাংলাদেশের ১ টাকা সামনা। বর্তমানে ১ সার্বিয়ান ডিনার সমান বাংলাদেশের ১ টাকা ০৭ পয়সা। সার্বিয়া ১০০ টাকা বাংলাদেশের ১০৭ টাকা।

শেষ কথা:

কর্ম পরিবেশ, থাকা খাওয়া, বেতন, যাওয়ার খরচ, ভবিষ্যত সম্ভাবনা সব কিছু বিচার বিবেচনা করলে বলা যায় বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য হচ্ছে সার্বিয়া। আর যেহেতু খুব দ্রুতই সার্বিয়া সেনজেন ভুক্ত দেশে পরিনত হতে যাচ্ছে তাই সময় থাকতেই তার সদ ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও যেহেতু ৩ বছর সেখানে অবস্থা করার পর পি আর কার্ড পাওয়ার সুযোগ রয়েছে সেহেতু সার্বিয়া সামগ্রিক ভালো একটি ভালো দেশই বলা যায়। সার্বিয়া দেশ কেমন এ নিয়ে এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। 

Sazzadul Islam

আমি সাজ্জাদুল ইসলাম৷ দীর্ঘ সময় থেকে পাসপোর্ট, ভিসা এবং প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করছি৷ সে অভিজ্ঞতার আলোকে এখানে নিয়মিত পাসপোর্ট, ভিসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমসাময়িক তথ্য ও আপডেট দেওয়ার চেষ্টা করি।

Post a Comment

Previous Post Next Post
This Template Designed By E10Script