বাংলাদেশে থেকে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক জনশক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উচ্চ শিক্ষা, ব্যবসা কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে গমন করে। এই বিশাল জনশক্তির একটি বড় অংশ যায় ইউরোপের দেশ গুলো। বিদেশগামীদের নিকট ইউরোপের দেশ গুলো স্বপ্নের মত। আর এই স্বপ্নটা আরো রঙিন হয় যদি দেশটি শেনজেন ভুক্ত কোন দেশ হয়। বাংলাদেশিদের নিকট তেমনই একটি স্বপ্নের দেশ হলো পোল্যান্ড। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর পোল্যান্ড যাওয়ার জন্য অনেক লোক ফাইল জমা দেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ডের ভিসা রেশিও তুলনা মূলক কম হওয়ায় অনেকের ইচ্ছে থাকলে শেষ পর্যন্ত পোল্যান্ড যেতে পারেন না। আর বর্তমানে পোল্যান্ড যাওয়ার খরচও তুলনা মূলক ভাবে বেশি। আজকের এই আলোচনায় আমরা মূলত পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে এই দিকটি নিয়েই কথা বলার চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুন:
পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে?
পোল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত এবং একই সাথে সেনজেন ভুক্ত একটি দেশ। তাই বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার চাহিদা প্রচুর। আর এই উচ্চ চাহিদার কারণে বাংলাদেশ থেকে পোল্যান্ড যাওয়ার খরচ তুলনামূলক ভাবে ইউরোপের কিছু দেশের তুলনায় বেশি। তবে পোল্যান্ড যাওয়ার খরচ বেশি হওয়ার আর একটি অন্যতম কারণ হলো বাংলাদেশে পোল্যান্ডের এম্বাসি বা দূতাবাস না থাকা।
ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার পর ফাইল জমা বা ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য ইন্ডিয়ায় অবস্থিত পোল্যান্ডের দূতাবাসের যেতে হয়। যার ফলে ইন্ডিয়ায় যাতায়াত থাকা খাওয়ার খরচ পোল্যান্ড যাওয়ার মূল খরচের সাথে যুক্ত হয়ে পোল্যান্ড যাওয়ার খরচ বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। তবে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে পোল্যান্ডের দূতাবাস খোলার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে যদি পোল্যান্ডের দূতাবাস ওপেন হয় তাহলে পোল্যান্ড যাওয়ার খরচ অনেকটা কমে যাবে।
সম্পর্কিত পোস্ট: কানাডা যেতে কত টাকা লাগে ২০২৫
এখন আসি মূল আলোচনায়। সঠিন জ্ঞান এবং ঠিকমত জানা শোনা থাকলে নিজে নিজেই পৃথিবীর যে কোন দেশের ওয়ার্ক পারমিট বের করা থেকে শুরু করে ভিসা সব কিছু করা যায়। পোল্যান্ডও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই আপনার যদি সঠিক জানা শোনা থাকে কিংবা পোল্যান্ডে আপনার পরিচিত কেউ থাকে তাহলে সব মিলিয়ে ৮ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মধ্যে পোল্যান্ডে যেতে পারবেন। তবে আপনার যদি সঠিক জানাশোনা বা পরিচিত কেউ না থাকে তাহলে কি করবেন?
পোল্যান্ডের ভিসা নিজে নিজে করতে অক্ষম হলে কিংবা পোল্যান্ডে আপনার পরিচিত কেউ না থাকলে আপনাকে কোন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তাদেরকে আপনি আপনার পাসপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্র দিয়ে দিবে তারা বাকি সব কাজ করে দিবে। আপনি যদি কোন এজেন্সির মাধ্যমে পোল্যান্ড যেতে চান তাহলে আপনাকে মিনিমাম ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে।
আরও পড়ুন: সার্বিয়া কি সেনজেন হবে
এক্ষেত্রে ওয়ার্ক পারমিট করার সময় এজেন্সিকে ১ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা এডভান্স দিতে হবে। বাকি টাকা ভিসা হওয়ার পর এজেন্সি কে পরিশোধ করতে হবে। তবে আপনার খরচ কিন্তু এখানেই শেষ না। যেহেতু পোল্যান্ডের ভিসার জন্য ইন্ডিয়াতে গিয়ে ফাইল জমা দিতে হয় সেহেতু ইন্ডিয়া যাওয়ার ভিসা, যাতায়াত ভাড়া, থাকা খাওয়া সব কিছু আপনাকে বহন করতে হবে। কিছু কিছু এজেন্সি এত টাকা নেওয়ার পরও শেষ মূহুর্তে এসে এয়ার টিকিট কেটে দিতে অস্বীকৃতি জানায়৷ আপনার ক্ষেত্রেও যদি এমন ঘটে তাহলে খরচের খাতায় আরো বেশ কিছু টাকা যোগ হবে। এছাড়াও ইন্সুইরেন্স, মেডিকেল, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এইসব ছোট খাট কিছু খরচ তো আছেই।
সব মিলিয়ে বলতে গেলে পোল্যান্ড যেতে ১৩ লক্ষ প্লাস টাকা লাগবে। তবে এজেন্সির সাথে ভালোমত ডিল করতে পারলে এ খরচ কিছুটা কমানো যেতে পারে। আর পোল্যান্ড যাওয়ার ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন কোন দালাল না ধরে সরাসরি এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে। যদি সরাসরি এজেন্সির সাথে যোগাযোগ না করে দালালের মধ্যমে যোগাযোগ করেন। সেই ক্ষেত্রে পোল্যান্ড যাওয়ার খরচ আরো কিছুটা বৃদ্ধি হতে পারে।
শেষ কথা:
বাংলাদেশের সব জায়গায় এখন প্রতারকদের আনাগোনা। বিশেষ করে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে স্ক্যামিংটা তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি হয়। তাই যার মাধ্যমে পোল্যান্ড যাওয়ার চিন্তা করছেন তার হাতে আপনার কষ্টের টাকা তুলে দেওয়ার আগে তার সম্পর্কে ভালো ভাবে খোঁজ খবর নিবেন৷ এবং পোল্যান্ড গিয়ে আপনাকে কি কাজ করতে হবে, কত বেতন পাবেন এগুলো নিয়ে খোলামেলা তার সাথে কথা বলে নিবেন। সর্বশেষ বলবো ইউরোপ যাওয়া হচ্ছে ধৈর্যের খেলা। ধৈর্য ধরে লেগে থাকুন ইনশাল্লাহ সফল হবেন। ২০২৫ সালে এসে পোল্যান্ড যেতে কত টাকা লাগে এ নিয়ে এই ছিল আমাদের আলোচনা।