পৃথিবীর প্রতিটি দেশের প্রতিটি নাগরিকের অন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র হচ্ছে পাসপোর্ট। দেশের অভ্যন্তরে যেমন আইডেন্টিফিকেশনের অন্যতম সহয়ক হলো জাতীয় পরিচয়পত্র বা NID Card। তেমনি দেশের বাহির কোন ব্যক্তির আইডেন্টিফিকেশনের অন্যতম প্রমানপত্র হচ্ছে পাসপোর্ট। সাধারণত একজন ব্যক্তি কেবল মাত্র একটি পাসপোর্টই হোল্ড করতে পারেন হোক সেটা ই-পাসপোর্ট বা এমআরপি পাসপোর্ট। দেশ ডিজিটালাইজেশনের ফলে বর্তমানে পাসপোর্ট তৈরি করা একদম সহজ হয়ে গেছে। এখন পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য আর দালাল ধরার প্রয়োজন হয়না। নিজে নিজেই খুব সহজে পাসপোর্টের আবেদন করা যায়। সেই প্রেক্ষিতেই এই আলোচনায় আমরা ২০২৫ সালে এসে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি পাসপোর্টের আবেদন এবং পাসপোর্টের খরচ নিয়েও একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।
আরও পড়ুন : ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৫
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে-Passport korte ki ki lage 2025:
এমআরপি পাসপোর্টের মত ই-পাসপোর্টও ৫ বছর এবং ১০ বছর উভয় মেয়াদি হয়ে থাকে। তবে ১৮ বছরের নিচে এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়স্ক আবেদনকারী ব্যক্তির ই-পাসপোর্ট হবে ০৫ বছর মেয়াদি এবং ৪৮ পৃষ্ঠার। বর্তমানে যেহেতু নতুন করে এমআরপি পাসপোর্টের ব্যবহার খুব বেশি হয় না সেহেতু এই সামগ্রিক আলোচনায় পাসপোর্ট বলতে মূলত ই-পাসপোর্টকেই বোঝানো হয়েছে। বর্তমানে পাসপোর্ট করতে কি কি লাগবে তা নির্ভর করে আবেদনকারীর বয়স, পেশা ইত্যাদির উপর। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তার উপর। তাই এখানে কি কি প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র লাগবে তার একটি তালিকা প্রদান করা হলো:
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৫
NID কার্ড/জন্ম নিবন্ধন সনদ:
আপনি যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হন অর্থাৎ আপনার বয়স যদি ১৮ থেকে ২০ বছর হয় তাহলে পাসপোর্টের আবেদনের জন্য আপনার NID কার্ড এর কপি অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদের যে কোন একটি প্রয়োজন হবে। তবে আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় তাহলে শুধুমাত্র অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হবে। কিন্তু আপনার বয়স যদি ২০ বছরের উর্ধে হয় তাহলে পাসপোর্টের আবেদনের জন্য আপনার NID কার্ড থাকাটা বাধ্যতামূলক।
পিতামাতার NID কার্ড:
পিতামাতার NID কার্ডের ফটোকপি কেবলমাত্র অপ্রাপ্ত বয়স্ক আবেদনকারী এবং তাদের ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ১৮ বছরের নিচে কোন আবেদনকারী অবিভাবক হিসাবে পিতা, মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যতিত পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
নাগরিকত্ব সনদ:
প্রাপ্ত বয়স্ক এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক উভয় আবেদনকারীর ক্ষেত্রেই ১০ বছর বা ৫ বছর মেয়াদী পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য আবেদনকারী নাগরিকত্ব সনদ প্রয়োজন হবে। এই ক্ষেত্রে আবেদনকারী ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং পৌরসভার বাসিন্দা হলে পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র ব্যবহার করবেন।
অনলাইন আবেদনের কপি:
https://www.epassport.gov.bd সাইটে সঠিক এবং নির্ভুল ভাবে পাসপোর্টের আবেদন সম্পূর্ন করার পর অনলাইন আবেদনের কপিটি পাসপোর্ট আফিসে পাসপোর্ট করার জন্য জমা দিতে হবে। কিভাবে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন তা এই পোস্টের নিচের অংশে দেখানো হয়েছে।
পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রিসিট:
পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত আবেদন ফি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই পরিশোধ করা যায়। অফলাইনে ব্যাংক চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করে অথবা অনলাইন এ চালানের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন ফি পরিশোধ করে তার কপি বা রিসিট সংগ্রহ করে রাখতে হবে। যা পরবর্তীতে পাসপোর্ট আফিসে পাসপোর্ট করতে প্রয়োজন হবে।
পেশার প্রমান পত্র:
পাসপোর্ট করার জন্য আবেদনকারীর পেশার প্রমানপত্র থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। ছাত্রদের ক্ষেত্রে পেশার প্রমান পত্র হিসাবে স্টুডেন্ট আইডি এবং চাকুরিজীবীদের জন্য চাকরির কার্ড পাসপোর্টের করতে প্রয়োজন হবে। কিন্তু পেশা হিসাবে কৃষক নির্বাচন করলে তার সাপেক্ষে কোন প্রমান পত্র পেশ করতে হবে না। তবে পেশা কৃষি না হলে আবেদন করার সময় কৃষক না সিলেক্ট করাই উত্তম।
বৈবাহিক অবস্থার সনদ:
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পাসপোর্টে আবেদন করার সময় বৈবাহিক অবস্থার সনদ অর্থাৎ বিবাহ সনদ কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে তালাকনামা দাখিল করতে হবে।
3R সাইজ ছবি:
পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য আবেদন ফর্মে কিংবা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কোন প্রকার ছবি জমা দিতে হয় না। তবে আবেদনকারীর বয়স যদি ০৬ বছরের নিচে হয় তাহলে ০৫ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্টের আবেদনকারীর সদ্য তোলা ল্যাব প্রিন্ট 3R সাইজ ছবি প্রয়োজন হবে। তবে ই-পাসপোর্টের জন্য এই ছবি সত্যায়ন করার কোন প্রয়োজন হবে না।
NOC / GO:
এটি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরাগণ সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণ করতে চাইলে পাসপোর্টের আবেদন করার সময় তাদের GO (Government Order) প্রয়োজন হবে। তবে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীগণ যদি ভ্রমনের জন্য ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন তাহলে তাদের NOC (No Objection Certificate) প্রয়োজন হবে GO এর প্রয়োজন হবে না।
কিভাবে পাসপোর্টের আবেদন করবেন:
বর্তমানে আপনি কোন দালাদের সাহায্য ছাড়াই নিজের কম্পিউটার, ল্যাপটপ এমনি কি হাতের স্মার্ট ফোন দিয়েও ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন। এর জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে https://www.epassport.gov.bd সাইটে প্রবেশ করতে হবে।
তারপর সেখান থেকে Apply Onlie for e-Passport/Re-Issue বক্সে থাকা Directly to Online Application ক্লিক করে একাউন্ট তৈরি করতে হবে। একাউন্ট তৈরি করা হয়ে গেলে লগ ইন করে Apply for a new passport -এ ক্লিক করে আপনার প্রয়োজনীয় যাবতীয় তথ্য দিয়ে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। পোস্ট বেশি দীর্ঘ হবে বিধায় এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হলো না। এই বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত একটি পোস্ট আছে আপনি চাইলে আবেদন করার সময় সেটির সাহায্য নিতে পারেন : ১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্টের আবেদনের নিয়ম
শেষ কথা:
দেশে ই-পাসপোর্টের যাত্রা শুরু হওয়ার পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সেক্টরে বেশ অভাবনীয় কিছু পরিবর্তন এসেছে। একসময় সাধারণ মানুষ দালাল ছাড়া পাসপোর্টে করাকে প্রায় অসম্ভব মনে করত। অথচ এখন খুব সহজেই যে কেউ যে কোন জায়গা থেকে তার নিজের, পরিবার বা অন্যের জন্য পাসপোর্টের আবেদন করতে পারেন। আর ই-পাসপোর্ট করার জন্য ছবি এবং অন্যন্য কাগজ পত্র সত্যায়িত করার প্রয়োজন না হওয়ায় এই কাজটি আরো সহজ এবং ঝামেলা মুক্ত হয়েছে। আপনি যদি নিজে নিজে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে চান তাহলে আশা করি "পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে - passport korte ki ki lage 2025" এই পোস্টটি আপনার জন্য বেশ সহায়ক হবে। পাসপোর্ট রিলেটেড এমন সব প্রয়োজনীয় তথ্য, নিউজ ও টিউটরিয়াল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।