ব্যাংকে পাসপোর্টের ফি প্রদানের প্রক্রিয়া বেশ সহজ ও নিরাপদ। তবে আমাদের অজ্ঞতার কারণে এই প্রক্রিয়াটিকে আমরা বেশ জটিল এবং ঝামেলা পূর্ন কাজ বলে মনে করি। সাধারণত আবেদনকারীকে পাসপোর্টের নির্ধারিত ফি পরিশোধের জন্য এ চালানে (A-Challan) প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন নাম, জন্মতারিখ ও পরিচয়পত্রের তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করে এ চালানের কপি সংগ্রহ করতে হয়। অতঃপর ব্যাংকে গিয়ে ফি পরিশোধ করে ব্যাংক থেকে চালান কপিটি সংগ্রহ করে আঞ্চলিক পাসপোর্ট জমা দিলেই ফি প্রদানের কাজ শেষ। এছাড়াও আপনি সরাসরি নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়েও চালান রশিদের মাধ্যমে পাসপোর্টে ফি পরিশোধ করতে করতে পারবে। আপনাদের সুবিধার জন্য এই আলোচনায় আমরা মূলত ব্যাংকে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়মের এই সংক্ষিপ্ত আলোচনাটাকেই আরো সহজ এবং বিস্তারিত ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি৷
সম্পর্কিত পোস্ট : অনলাইনে এ চালান দিয়ে পাসপোর্ট ফি প্রদান
ব্যাংকে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম:
ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে নিচের ধাপগুলো যথাযথ ভাবে অনুসরণ করতে হবে:
A Challan -এ প্রবেশ:
সর্বপ্রথম আপনাকে আপনার কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্ট ফোনের যে কোন একটি ব্রাইজার ওপেন করতে হবে। তারপর সে ব্রাউজারের সার্চ বারে a challan বা এ চালান লিখে সার্চ দিতে হবে। অথবা আপনি চাইলে সরাসরি এখান থেকেও এ চালানের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবে পারবেন। এরপর প্রথম যে রেজাল্টটি শো করবে সেখানে প্রবেশ করবেন। অর্থাৎ "অটোমেটেড চালান সিস্টেম - iBAS" এ ক্লিক করবেন।
তথ্য প্রদান:
এরপর আপনার সামনে অটোমেটেড চালান সিস্টেমের হোম পেজটি ওপেন হবে। সেখান থেকে পাসপোর্ট বক্সে ক্লিক করে পাসপোর্ট ফি সিলেক্ট করতে হবে। তারপর আপনার সামনে একটি পপ আপ পেজ ওপেন হবে। সেখান "আবেদনের প্রকৃতি" থেকে আপনি যত পেজের (৪৮/৬৪ পেজ) পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন সেটি সিলেক্ট করতে হবে।
এবং "বিতরণের প্রকৃতি" থেকে কত বছর মেয়াদি এবং কত সময়ের মধ্যে ডেলিভারি চান সেটি নির্বাচন করতে হবে। মূলত ই-পাসপোর্টের আবেদনের সময় আপনি যত পেজ, যত বছর এবং যত দিনের মধ্যে ডেলিভারির চেয়ে আবেদন করেছেন এখানেও সেভাবেই তথ্য দিতে হবে। যথাযথ ভাবে সবকিছু নির্বাচন করা হয়ে গেলে OK বাটনে ক্লিক করতে হবে।
অর্থ প্রদানকারীর পরিচয় যাচাই:
OK বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার সামনে থেকে পপ আর পেজটি চলে যাবে। এই পেজে আপনি যে যে অপশন গুলো নির্বাচন করলেন সেগুলো এবং মোট পাসপোর্ট ফি আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে। পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য এই পেজের ৩ নং অপশন "যে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের অর্থ জমা দেওয়া হচ্ছে" থেকে ব্যক্তির উপর ক্লিক করতে হবে।
এবার আপনার সামনে "যার মাধ্যমে প্রদত্ত হচ্ছে (ব্যক্তি)" নামে নতুন একটি আপশন প্রদর্শিত হবে। সেখানে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধন নাম্বার, জন্ম তারিখ এবং ফোন নাম্বার দিয়ে "Check NID" বাটনে ক্লিক করতে হবে। এই ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে যে জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধন দিয়ে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছেন সেই জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধন নাম্বার এবং ফোন নাম্বার ব্যবহার করতে হবে।
পেমেন্ট ম্যাথড নির্বাচন:
আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধন যাচাই করা হয়ে গেলে ৫নং অপশন "অর্থপরিশোধের ধরণ নির্বাচন" থেকে "ব্যাংক কাউন্টারে জমা (OTC)" নির্বাচন করতে হবে। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তা একবার ভালোভাবে দেখে নিয়ে Save বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনার সামনে একটি পপ আপ পেজ ওপেন হবে সেখানে OK বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি প্রদান:
Ok বাটনে ক্লিক করার পর চালান ট্রকিং নাম্বার, আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধনের যাবতীয় তথ্য, পাসপোর্টের মোট ফি সহ অর্থ জমা গ্রহণ স্লিপ আপনার সামনে প্রদর্শিত হবে৷ আপনাকে এই কপিটি প্রিন্ট করে সোনালী ব্যাংক বা পাসপোর্ট ফি গ্রহণ করে এমন ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি সহ এই কপিটি প্রদান করে মূল চালান কপিটি সংগ্রহ করতে হবে।
আরও পড়ুন: ই-পাসপোর্টের কি কি পরিবর্তন করা হয়েছে ২০২৫
পাসপোর্টের টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমা দেওয়ার নিয়ম:
আপনি যদি অনলাইনে এ চালান ব্যবহার করে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার জন্য চালান কপি তৈরি করতে না চান তাহলে আপনি সরাসরি আপনার নিকটস্থ নির্ধারিত ব্যাংকের যে কোন শাখায় গিয়েও পাসপোর্টের টাকা জমা দিতে পারবেন। টাকা দেওয়ার জন্য যেহেতু ব্যাংকে যেতেই হবে সেহেতু অনেকেই সরাসরি ব্যাংকে গিয়ে চালান ফর্ম পূরন করে টাকা পরিশোধ করতেই পছন্দ করেন ৷
এই ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত ব্যাংকের কোন শাখায় নিয়ে হেল্প ডেক্সে গিয়ে পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার কথা বললেই তারা আপনাকে চালান ফর্ম দিবে। এবার আপনার পাসপোর্ট আবেদনের তথ্য অনুসারে এই ফর্মটি যথাযথ ভাবে পূরণ করতে হবে। ফর্ম পূরনে যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে হেল্প ডেক্সে যিনি আছেন তাকে বললেই তিনি আপনাকে হেল্প করবেন।
এবার ফর্ম যথাযথ ভাবে পূরন করা হয়ে গেলে নির্ধারিত পাসপোর্ট ফি সহ ফর্মটি ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিতে হবে। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে তিনি টাকা গ্রহন করে আপনি দুটি কাগজ দিবেন। একটি নিজের কাছে রেখে দিবেন। অন্যটি পাসপোর্টের আবেদনের সাথে জমা দিবেন।
কোন কোন ব্যাংকে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়া যায়?
ই-পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার জন্য নির্ধারিত কিছু ব্যাংক রয়েছে। এই ব্যাংক গুলো সাধারণত প্রতিটি জেলার অঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের আশে পাশেই হয়ে থাকে। যাতে গ্রাহকগণ খুব সহজেই ই-পাসপোর্টের ফি প্রদান করতে পারে। যে ব্যাংকগুলোতে পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়া যায় সেগুলো হলো:
- ওয়ান ব্যাংক
- প্রিমিয়ার ব্যাংক
- ট্রাস্ট ব্যাংক
- ব্যাংক এশিয়া
- ঢাকা ব্যাংক এবং
- সোনালী ব্যাংক
সোনালী ব্যাংক ছাড়া বাকি ব্যাংক গুলোর যে কোন শাখায় ই-পাসপোর্টের ফি পরিশোধ করা যাবে। কিন্তু সোনালী ব্যাংকে কেবলমাত্র নির্ধারিত কিছু শাখায় ই-পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে হবে।
টাকা জমা দেওয়ার পর পাসপোর্টে ভুল ধরা পড়লে করনীয়:
টাকা জমা দেওয়ার পর যদি আবেদনে কোন ভুল পরিলক্ষিয় হয় তাহলে করনীয় কি? বা কোন কারণে অনলাইন আবেদনটি বাতিল করতে হলে পুনরায় কি টাকা পরিশোধ করতে হবে? একথায় এর উত্তর দেওয়া কঠিন।
ই-পাসপোর্টের আবেদন ফি পরিশোধ করা হয় মূলত যে জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেছেন তার সাপেক্ষে। আপনার পাসপোর্টের আবেদনের সাপেক্ষে নয়৷ তাই কোন কারণে আপনার পাসপোর্ট আবেদনটি বাতিল করতে হলে আপনার টাকা পরিশোধটি বালিত হবে না। অর্থাৎ পুনরায় আপনাকে টাকা পরিশোধ করতে হবে না।
তবে পাসপোর্টের আবেদন কপি এবং অন্যান্য কাগজপত্র জমা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার পর যদি আপনার ই-পাসপোর্টের আবেদন ভুল ধরা পরে। বা আবেদনটি বাতিল করতে হয়। তাহলে আপনার ফি পরিশোধটি বালিত হবে। অর্থাৎ পুনরায় নতুন আবেদনের জন্য আপনাকে টাকা পরিশোধ করতে হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট দেওয়ার আগে আবেদনটি বাতিল হলে পূর্বের ফি পরিশোধের রসিদ দিয়েই আপনি পুনরায় আবেদন করতে পারবেন।
সেজন্য পাসপোর্টের অনলাইন আবেদন কপি এবং অন্যান্য কাগজপত্র জমা দেওয়ার সময় চেষ্টা করবেন আবেদন ফি জমার রশিদটি ফটোকপি জমা দিতে। যাতে পরবর্তীতে যদি আবেদনে কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে আবেদন ফি জমার রশিদটি না থাকার কারণে বিপদে পড়তে না হয়।
শেষ কথা:
বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি অনেক ব্যাংকেই পাসপোর্ট ফি প্রদান করা যায়। যার প্রক্রিয়াও বেশ সহজ। তবে আমরা সবসময়ই ব্যাংকের কাজকে বেশ ঝামেলাপূর্ণ বলে মনে করে আসেছি। আর এই ঝামেলাপূর্ণ কাজটিকেই সহজ করার জন্য এখানে আমরা ব্যাংকে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম ২০২৫ নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আপনাদের সকল সংশয় দূর করতে সক্ষম হয়েছি।