সার্বিয়া বেতন কত? সার্বিয়া যাওয়ার উপায়
সার্বিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ, যা বালকান উপদ্বীপে অবস্থিত। দেশের রাজধানী বেলগ্রেড, যা দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সার্বিয়ার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এখানে বিভিন্ন সভ্যতার প্রভাব স্পষ্ট লক্ষ্য করা যায়, যার মধ্যে রোমান, বাইজেন্টাইন এবং অটোমান সাম্রাজ্যের চিহ্ন অন্যতম। সার্বিয়া পরিচিত তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিভিন্ন পাহাড়, নদী এবং বনভূমির জন্য। দেশের খাবার, সংগীত এবং নৃত্য এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সার্বিয়া ইউরোপের অন্যান্য দেশের গুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখায় এখানকার কর্ম পরিবেশও বেশ চমৎকার। যার কারনে সম্প্রতি কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে সার্বিয়া যাওয়া প্রবনাতা বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ সে কারণে এই আলোচনায় আমরা সার্বিয়া বেতন কত? সার্বিয়া যাওয়ার উপায় সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করি৷
আরও পড়ুন :
সার্বিয়ার কর্ম পরিবেশ:
সার্বিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের সাথে সাথে দেশটিতে বিদেশী শ্রমিকদের জন্য কর্ম পরিবেশ উল্লেখযোগ্য ভাবে উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি,শিল্প,শক্তি,শক্তি,পরিবহন এবং টেলিযোগাযোগ সেক্টরে। বর্তমানে দেশটিতে তথ্য প্রযুক্তি, নির্মাণ এবং উৎপাদন শিল্পে বিদেশী শ্রমিকদের চাহিদা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে বর্তমানে বাংলাদেশীদের মধ্যে সার্বিয়াতে কাজের জন্য যাওয়ার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার অন্যতম কারণ গুলো মধ্যে হলো সেখানে কাজের সুযোগ সাধারণত তুলনামূলক ভাবে ভালো এবং বেতনও বেশ সন্তোষজনক।
দেশও সম্প্রতি বিদেশী শ্রমিকদের জন্য ভিসা ও কাজের অনুমোদন প্রক্রিয়া অনেকটা সহজ করেছে। যার কারণে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাওয়ার চেয়ে সার্বিয়াতে যাওয়া কিছুটা সহজ। এছাড়া, সার্বিয়ার জীবনযাত্রার মান ও খরচ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। যা বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য একটি বেশ ভালো সুবিধা।
তবে সার্বিয়ার কাজের বেতন এবং কর্ম পরিবেশ যদিও বেশ সন্তোষজনক তবুও বাংলাদেশীদের জন্য এদেশের ভাষা একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে বর্তমানে অনেক কোম্পানিই যোগাযোগের জন্য ইংরেজি ব্যবহার করে। যার ফলে ইংরেজি জানাদের জন্য এখানকার কর্ম পরিবেশ বলা চলে ভালোই সুবিধা জনক। তবে সার্বিয়া একটি হেল্পফুল ও সহনশীল সমাজ হওয়ায় যেসব বাঙালী ইংরেজি কম জানেন বা জানেন না সেসব শ্রমিকদের জন্যও এখানকার কর্ম পরিবেশ দ্রুতই সহনীয় এবং সহজ হতে সহায়তা করে।
সার্বিয়া বেতন কত?
সার্বিয়াতে একজন শ্রমিকের বেতন মূলত বিভিন্ন খাত ও পেশার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত, সার্বিয়ায় আপনার বেতন কত হবে তা নির্ভর করে আপনি কতটা দক্ষ এবং অভিজ্ঞ তার উপর। দক্ষ এবং অভিজ্ঞ শ্রমিকের চেয়ে অদক্ষ শ্রমিকের বেতন অনেক কম হয়৷ তাই নিম্নলিখিত পেশাগুলোর জন্য গড়ে বেতন নিচে দেওয়া হলো:
- কৃষি শিল্প : মাসিক ৪০০ থেকে ৮০০ ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় মোটামুটি ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা প্রায়।
- আইটি ও টেকনোলজি : মাসিক ৫০০ থেকে ১২,০০ ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় মোটামুটি ৬৫ হাজার থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা প্রায়।
- ইঞ্জিনিয়ারিং: মাসিক ৮০০ থেকে ১,৫০০ ইউরো মাসিক। যা বাংলাদেশি টাকায় মোটামুটি ১ লক্ষ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা প্রায়।
- স্বাস্থ্য সেবা: মাসিক ৪০০ থেকে ১,২০০ ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় মোটামুটি ৫০ হাজার থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা প্রায়।
- নির্মাণ: মাসিক ৪০০ থেকে ১,০০০ ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় মোটামুটি ৫০ হাজার থেকে ১.২ লক্ষ টাকা প্রায়।
- সেবা শিল্প: মাসিক ৩০০ থেকে ৮০০ ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় মোটামুটি ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা প্রায়।
মোটামুটি, সার্বিয়াতে গড় বেতন ৫০০ থেকে ১,২০০ ইউরোর মধ্যে হয়ে থাকে। তবে, বিশেষ দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ বেতন আরও বাড়তে পারে।
সার্বিয়া যাওয়ার উপায় :
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক হিসেবে সার্বিয়া যাওয়ার জন্য বেশ কিছু ধাপে অতিক্রম করতে হয়। তবে এটি অন্যান্য দেশে শ্রমিক ভিসা প্রক্রিয়ার মতোই। বর্তমানে কাজের জন্য বাংলাদেশীদের নিকট সার্বিয়া একটি জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নির্মাণ, কৃষি, উৎপাদন এবং অন্যান্য শ্রমিক বিষয়ক কাজ গুলোর তে সহজে ভিসা পাওয়ার জন্য। তবে, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক হিসেবে সার্বিয়ায় যাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হবে। আপনাদের এই কাজকে কিছুওটা সহজ করার জন্য নিচে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক হিসেবে সার্বিয়া যাওয়ার উপায়ের বিস্তারিত প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
ওয়ার্ক/কর্মসংস্থান ভিসা:
আপনি যদি সার্বিয়াতে কাজের জন্য যেতে চান, তাহলে আপনার সার্বিয়ার সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার মাধ্যমে ওয়ার্ক বা কর্মসংস্থান ভিসার আবেদন করতে হবে।
সার্বিয়াতে কর্মসংস্থান ভিসা প্রাপ্তির জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
নিয়োগপত্র:
প্রথমত, আপনাকে অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সার্বিয়াতে কোনো নিয়োগকর্তা থেকে চাকরির অফার বা নিয়োগপত্র পেতে হবে। এটি আপনার সার্বিয়ার ভিসার আবেদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভিসা আবেদন:
নিয়োগ পত্র পাওয়ার পর আপনাকে সার্বিয়ার দূতাবাস বা কনস্যুলেটে কর্মসংস্থান ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যথাযথ ভাবে আবেদন ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সার্বিয়ার দূতাবাস বা কনস্যুলেটে জমা দিতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
সাধারণত সার্বিয়ার ভিসার আবেদন করার জন্য নিম্নলিখিত নথি প্রয়োজন হয়:
- বৈধ পাসপোর্ট (অবশ্যই মেয়াদ থাকতে হবে)
- নিয়োগপত্র
- শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণ
- স্বাস্থ্য বীমা
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (যা আপনার আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণ করে)
আবেদন ফি:
শ্রমিক হিসাবে ওয়ার্ক ভিসায় আবেদন করার জন্য আপনাকে ওয়ার্ক ভিসার নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে।
সাক্ষাৎকার:
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ার জন্য দূতাবাসে আপিনার সাক্ষাৎকার হতে পারে। যেখানে আপনাকে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সার্বিয়ার সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করা হতে পারে।
ভিসা প্রাপ্তি:
সব কিছু ঠিকঠাত ভাবে সম্পন্ন করা হলে গেলে, আপনার ভিসা অনুমোদিত হবে। তখন আপনি ওয়ার্ক ভিসায় সার্বিয়ায় যেতে পারবেন।
সার্বিয়াতে ওয়ার্ক/কর্মসংস্থান ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য ও সর্বশেষ আপডেট জানতে সার্বিয়ান দূতাবাসের ওয়েবসাইট দেখার পরামর্শ রইলো।
শেষ কথা :
বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক হিসাবে কাজের উদ্দেশ্যে সার্বিয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ইতিবাচক দিক রয়েছে। প্রথমত, সার্বিয়া একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ, যেখানে বিভিন্ন শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে, বিশেষ করে আইটি, নির্মাণ এবং পরিষেবা ইত্যাদি সেক্টরে। এছাড়া, সার্বিয়ার কর্ম পরিবেশ এবং প্রশিক্ষণ সুযোগও তুলনামূলক ভালো। যা আপনার পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সেখানে কাজ করার সুবাদে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নতুন সংস্কৃতি ও পরিবেশের সাথে পরিচিত হওয়ার একটা চমৎকার সুযোগও রয়েছে। সর্বোপরি, সার্বিয়ায় জীবনযাত্রার খরচ তুলনায় অনেক কম। যা আপনাকে সঞ্চয় এবং ব্যালেন্সড জীবনযাপন করার সুযোগ তৈরি করবে। সবমিলিয়ে, সার্বিয়া বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য হতে পারে। এই ছিল সার্বিয়ার যাওয়ার উপায় এবং সার্বিয়া বেতন কত নিয়ে আমাদের আয়োজন৷ আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।