ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে?

'ভারত' ভ্রমণের জন্য একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দেশ। প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনের এই দেশে অবশ্যই আপনাকে মুগ্ধ করবে। দিল্লির ঐতিহাসিক স্থাপনা যেমন হুমায়ুনের সমাধিসৌধ ও লাল কেল্লা থেকে শুরু করে, আগ্রার তাজমহল এবং রাজস্থানের জয়পুর হাওয়া মহল, প্রতিটি স্থানই তার নিজস্ব রুপে আপনাকে মুগ্ধ করবে। দক্ষিণ ভারতের বিচিত্র সব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, যেমন চেন্নাইয়ের বিখ্যাত মন্দির এবং কেরালার নদীতে চলা নৌকা, আপনাকে নতুন অভিজ্ঞতার স্বাদ দেবে। উত্তর ভারতের হিমালয়াঞ্চল থেকে শুরু করে দক্ষিণের সমুদ্র সৈকত, প্রতিটি অঞ্চলের খাবার, ভাষা এবং আচার-ব্যবহার আপনার ভ্রমণকে অভিজ্ঞতাকে আরও রঙিন করে তুলবে। আপনার এই ভ্রমন অভিজ্ঞতাকে আর একটু সুন্দর এবং ঝামেলা মুক্ত করতে আমরা এই আলোচনায় ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা এবং এই ভিসা করতে কি কি লাগে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

আরও পড়ুন : ১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার প্রকারভেদ:

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা হলো বিদেশি নাগরিকদের জন্য একটি অনুমতি বা ছাড়পত্র, যা বিদেশি কোন নাগরিকে ভারতে প্রবেশ, পর্যটন স্থানে ভ্রমণ, অবসর ছুটি কাটানো বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেয়। 

শর্ট-টার্ম টুরিস্ট ভিসা : 

সাধারণত বিনোদন, পর্যটন, বন্ধু বা আত্মীয়দের সাথে স্বাক্ষাতের নৈমিত্তিক ৩০, ৯০ বা ১৮০ দিনের জন্য শর্ট-টার্ম টুরিস্ট ভিসা প্রদান করা হয়।

ই-টুরিস্ট ভিসা (eTV) : 

কেবলমাত্র আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু (ব্যাঙ্গালোর), চেন্নাই, কলকাতা, কোচিন, দিল্লী, গয়া, গোয়া, হায়দরাবাদ, লখনউ, মুম্বাই, অমৃতসর, তিরুচিরপল্লী, জয়পুর, ত্রিভান্দ্রম এবং বারাণসী বিমানবন্দর দিয়ে আগমন ও প্রস্থানের জন্য এই টুরিস্ট ভিসা অনুমোদন করা হয়। একবার প্রবেশের জন্য বৈধ্য এই ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়, এই ভিসা ৩০ দিনের জন্য বৈধ হয়।

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে?

ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসার আবেদন করার আগে ভিসা সংক্রান্ত সকল তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে তার বিস্তারিত নির্দেশাবলী নিচে দেওয়া হলো:

পাসপোর্ট :

  • মেয়াদ: ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা প্রাপ্তির জন্য আবেদনের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের মেয়াদ যাত্রার দিন থেকে অন্তত ৬ মাস থাকতে হবে।
  • পৃষ্ঠা: ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা প্রাপ্তির জন্য পাসপোর্টে কমপক্ষে ২টি ফাঁকা পৃষ্ঠা থাকা আবশ্যক, যাতে ভিসা স্ট্যাম্প করা যায়।

ভিসা আবেদন ফর্ম :

  • অনলাইন ফর্ম: ভারতের টুরিস্ট ভিসার আবেদন করার জন্য ভারতের ভিসা অনলাইন পোর্টাল এ গিয়ে যথাযথ ভাবে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
  • তথ্য: আবেদন ফর্মে অবশ্যই ব্যক্তিগত তথ্য, ভ্রমণ পরিকল্পনা, এবং যোগাযোগের ঠিকানা সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।

ছবি :

  • সাইজ: সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি প্রয়োজন হবে।
  • ব্যাকগ্রাউন্ড বা পটভূমি: ছবি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড বা পটভূমিতে তোলা ছবি হতে হবে।
  • মুখাবয়ব: মুখ পরিষ্কার দেখা যাবে এমন ছবি হতে হবে; সানগ্লাস বা হ্যাট পরা ছবি ব্যবহার করা যাবে না।

ভ্রমণ পরিকল্পনা :

  • টিকিট: আসা-যাওয়ার নিশ্চিত বিমান, ট্রেন বা বাসের টিকিটের কপি প্রয়োজন হবে, যা প্রমাণ করবে আপনার ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা।
  • হোটেল রিজারভেশন: হোটেলের বুকিং কনফার্মেশন বা বন্ধু/স্বজনের ঠিকানা এবং যোগাযোগের নম্বর।

আর্থিক প্রমাণ:

  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট: সাম্প্রতিক ৩-৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, যা আপনার আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করবে।
  • ফিনান্সিয়াল সাপোর্ট: যদি কেউ আপনাকে অর্থ সাহায্য বা স্পন্সর করে থাকে, তাহলে তার আর্থিক প্রমাণও দিতে হবে।

ভিসা ফি :

  • ফি পরিশোধ: আবেদন করার সময় ভিসা ফি জমা দিতে হবে। ভিসা ফি দেশের ভিত্তিতে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে সাধারণত এটি ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেই অনলাইনে জমা করা যায়।

অতিরিক্ত নথি :

  • চাকরি প্রমাণ: যদি আপনি চাকুরিজীবী হন, তাহলে চাকরির সনদপত্র বা অফিসের পরিচয়পত্র।
  • ব্যবসায়ীদের জন্য: ব্যবসার সনদপত্র, ট্যাক্স রিটার্ন ইত্যাদি।
  • শিক্ষার্থী: শিক্ষার্থী হলে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র।

শেষ কথা : 

ভারতের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য আপনাকে বারবার এখানে ফিরে আসার বাধ্য করবে। সে কারণে ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা করতে কি কি লাগে? সে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা খুবই জরুরি। ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা সাধারণত ৩০ দিনের জন্য অনুমোদন করা হয়, তবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ৬ মাস বা তার বেশি সময়ের জন্যও পাওয়া যায়। আবেদনকারীর বৈধ পাসপোর্ট, ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং থাকার স্থান সম্পর্কিত সকল তথ্য সঠিক থাকলেই কেবল আবেদনকারী ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা পেয়ে থাকেন। ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা পাওয়ার পরই কেবল মাত্র ভ্রমণকারী ভারতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। 

Next Post Previous Post