সাইপ্রাসে বেতন কত: সাইপ্রাস, Mediterranean সাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য বিখ্যাত। এটি তুরস্কের দক্ষিণে এবং গ্রীসের পূর্বে অবস্থিত। সাংস্কৃতিক দিক থেকে, সাইপ্রাসে গ্রীক এবং তুর্কি উভয় সংস্কৃতির সমন্বয় দেখা যায়। যা সেখানকার ভাষা, খাদ্যাভ্যাস এবং বিভিন্ন উৎসব গুলোর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। সৌন্দর্য, ঐতিহ্যের পাশাপাশি দ্বীপটি ওয়াইন এবং অলিভ অয়েলের জন্যও বিখ্যাত। সাইপ্রাসের ভৌগলিক পরিবেশও বেশ বৈচিত্র্যময়। এখানে যেমন রয়েছে বড় বড় পাহাড়, উপত্যকা তেমনি রয়েছে মনোরম সমুদ্র সৈকত।
এ কারণে দেশটি পর্যটক থেকে শুরু করে কাজের জন্য যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদের কাছেও একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। এই আলোচনায় আমরা বৈচিত্র্যময় এবং সমৃদ্ধশালী সাইপ্রাসে বেতন কত? সেখানের কর্ম পরিবেশ এবং কাজের সুযোগ সুবিধা কেমন তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করবো। যদিও সাইপ্রাস রাজনৈতিকভাবে দুই ভাগে বিভক্ত তবুও আমরা আলোচনার সুবিধার জন্য দুই সাইপ্রাসকে সমন্বয় করেই আলোচনা করব।
আরও পড়ুন : বুলগেরিয়া বেতন কত?
সাইপ্রাস বেতন কত - cyprus per hour & monthly salary:
বাংলাদেশ থেকে সাইপ্রাসে কাজের জন্য যেতে চাইলে প্রথমেই সাইপ্রাস সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা এবং সেখানের কর্মপরিবেশ নিয়ে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অধিক বেতনের আশায় বিনা প্রস্তুতিতে সেখানে যাওয়া কিছুটা বোকামি। সাইপ্রাসে কাজের বেতন মূলত আপনি কোন ভিসায় সাইপ্রাসে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করবে। গ্রীস সাইপ্রাস এবং তুর্কি সাইপ্রাসের বেতন কাঠামো সম্পূর্ণ আলাদা। তাছাড়া বেতন বিভিন্ন খাত, পেশা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির উপরও নির্ভর করে। তাই দুই সাইপ্রাসের একদম সঠিক বেতন বলারটা কিছুটা দূরহ। তবে আমরা এখানে বাংলাদেশীদের জন্য সাধারণ ভাবে দুই সাইপ্রাসের একটি গড় বেতন সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি:
- নির্মাণ শিল্পে বেতন : নির্মাণ শিল্পে সাধারণ শ্রমিকদের মাসিক বেতন মোটামুটি প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ ইউরো হতে পারে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকার মত।
- পর্যটন ও হোটেল ব্যবস্থাপনায় বেতন : এই খাতে শ্রমিকদের মাসিক বেতন প্রায় ৮০০ থেকে ১২,০০ ইউরো হতে পারে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ টাকা থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। অভিজ্ঞ কর্মীদের জন্য সেটা আরো বেশি হতে পারে।
- কৃষি খাতে বেতন : কৃষি শ্রমিকদের বেতন সাধারণত মাসিক ৫৫০ থেকে ৮০০ ইউরোর মধ্যেই হয়ে থাকে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকার মত।
- ইলেকট্রনিকাল এবং মেকানিকাল কাজে বেতন : ইলেকট্রনিকাল এবং মেকানিকাল কাজে কর্মীদের বেতন সাধারণত মাসিক ৬০০ থেকে ৮০০ ইউরোর মধ্যেই হয়ে থাকে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকার মত।
- স্বাস্থ্যসেবা খাতে বেতন : চিকিৎসক বা নার্স বা স্বাস্থা সংশ্লিষ্ট খাতে বেতন মোটামুটি ১,০০০ থেকে ১,৫০০ ইউরো বা তারও বেশি হতে পারে। এটি মূলত অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা।
এছাড়া, কিছু কিছু চাকরির ক্ষেত্রে বেতন সে দেশের শ্রম আইন অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে আবার থাকা, খাওয়া ও অন্যান্য সুবিধার সুবিধা কোম্পানি ভেদে বিভিন্ন রকম হতে পারে।
আরও পড়ুন: গ্রীস সাইপ্রাস বেতন কত ২০২৫
তুর্কি/নর্থ সাইপ্রাস সর্বনিম্ন বেতন কত?
সাইপ্রাসের রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে দুই সাইপ্রাসের বেতন কাঠামোর মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। গ্রীস সাইপ্রাসের বেতন কাঠামো এক রকম। আবার তুর্কি সাইপ্রাসের বেতন কাঠামো আর একরকম। তুর্কি সাইপ্রাসের অংশটি এশিয়ার মধ্যে ধরা হয়।
তাই এশিয়ার দেশ গুলোর সাথে যদি তুর্কি সাইপ্রাসের বেতন তুলনা করি তাহলে বলা যায়, এশিয়ার দেশ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন হচ্ছে তুর্কি সাইপ্রাসে।
এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় তুর্কি সাইপ্রাসের ভালো দিক হলো এখানে একটি নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো রয়েছে। বর্তমানে এখানে সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেসিক বেতন হলো ৩৫ হাজার লিরা। বাংলাদেশি টাকায় যা দাঁড়ায় প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
খুশির খরব হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বিবেচনা করে তুর্কি সাইপ্রাসের শ্রম মন্ত্রণালয় বেসিক বেতন আরো বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছে।
গ্রীস/গ্রিক সাইপ্রাস বেসিক বেতন কত?
গ্রীস সাইপ্রাস বা গ্রিক সাইপ্রাস যাই বলেন না কেন এই অংশের নিয়ন্ত্রক দেশ হলো গ্রীস। সাইপ্রাসের এই অংশটিকে ইউরোপের অংশ হিসাবে মনে করা হয়। যে কারণে এই অংশে জীবন যাত্রার মান তুর্কি সাইপ্রাসের চেয়ে উন্নত।
একই সাথে এই অংশের কার্ম ক্ষেত্রও অনেক বড়। তবে তুর্কি সাইপ্রাসে সরকার নির্ধারিত বেতন কাঠামো থাকলেও গ্রীস সাইপ্রাসে নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো নেই। তবে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা উপর ভিত্তি করে গ্রীস সাইপ্রাসে অনেক টাকা উপর্জনের সুযোগ রয়েছে।
গ্রিক সাইপ্রাসে গড়ে মাসিক বেতন হচ্ছে প্রায় €600 থেকে €1,500 ইউরো। যা বাংলা টাকায় কনভার্ট করলে বর্তমান বাজার মূল্য অনুসারে দাঁড়াবে প্রায় ৮০ হাজার টাকা থেকে ২ লক্ষ টাকা। তবে অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকলে এই বেতন আরো অনেক গুন বৃদ্ধি পেতে পারে।
গ্রীস সাইপ্রাস এবং তুর্কি সাইপ্রাসের বেতন:
সাইপ্রাস ৯,২৫১ বর্গকিলোমিটার ছোট দ্বীপরাষ্ট্র হলেও দেশটি রাজনৈতিক ভাবে দুই ভাগে বিভক্ত। দেশটির উত্তর অংশ নিয়ন্ত্রণ করে তুরষ্ক যেটি তুর্কি সাইপ্রাস (উত্তর সাইপ্রাস তুর্কি প্রজাতন্ত্র) নামে পরিচিত এবং বাকি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে গ্রীস যা গ্রীস সাইপ্রাস (সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র) নামে পরিচিত। যেকারণে দেশটির সরকারি ভাষাও হচ্ছে গ্রিক, তুর্কী।
এই সমস্যাটির উদ্ভব হয় মূলত ৭০ এর দশক থেকে। রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্ব থাকলেও উভয় সাইপ্রাসের অর্থনীতিই বেশ শক্তিশালী। তবে গ্রীস নিয়ন্ত্রিত সাইপ্রাস অর্থনীতিতে তুলনামূলক ভাবে তুর্কি সাইপ্রাসের চেয়ে কিছুটা উন্নত। এই কারণে এই দুই অংশের কাজের বেতনের ক্ষেত্রেও বেশ পার্থক্য দেখা যায়। এবং এই পার্থক্যটি বিদেশি শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এর অন্যতম কারণ হলো অর্থনৈতিক অবস্থার, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃত।
আরও পড়ুন: সার্বিয়া কি সেনজেন হবে
বেতন স্তর:
গ্রীস সাইপ্রাসে গড় মাসিক বেতন তুর্কি সাইপ্রাসে গড় বেতনের তুলনায় বেশি। গ্রীস সাইপ্রাসে এভারেজ গড় মাসিক বেতন যেখানে প্রায় €600 থেকে €1,500 ইউরো। সেখানে তুর্কি সাইপ্রাসে এভারেজ গড় মাসিক বেতন প্রায় €400 থেকে €1200।
গ্রীস সাইপ্রাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মান অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু তুর্কি সাইপ্রাসে বেতন তুরস্কের অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল।
অর্থনীতি:
গ্রীস সাইপ্রাস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি দেশ এবং এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ায় এর অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং বিনিয়োগ বেশ শক্তিশালী। অন্যদিকে তুর্কি সাইপ্রাস তুরস্ক ব্যতিত অন্য কোন দেশের দ্বারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। ফলে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ এখানে কম এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নও তুলনামূলক ভাবে কম।
কর্মক্ষেত্র :
গ্রীস সাইপ্রাসে ব্যাংকিং, পর্যটন, এবং প্রযুক্তি খাতের চাকরি গুলোতে উচ্চ বেতনে পাওয়া যায়। অন্যদিকে তুর্কি সাইপ্রাসে কৃষি, স্থানীয় ব্যবসা এবং পর্যটন ভিত্তিক চাকরি বেশি প্রচলিত।
সাইপ্রাসের বেতন পার্থক্যের কারণ
- আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: গ্রীস সাইপ্রাস আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত একটি দেশ হওয়ায় এখানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমর্থন এবং বিনিয়োগ বেশি।
- মুদ্রা ব্যবস্থাপনা: গ্রীস সাইপ্রাসে ইউরো চালু থাকায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদ্যমান, যেখানে তুর্কি সাইপ্রাস তুর্কি লিরার উপর নির্ভরশীল, যা সম্প্রতিকালে চরম মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রার অবমূল্যায়নের শিকার।
- উন্নত কর্ম পরিবেশ: গ্রীস সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত হওয়ায় এখানকার কর্মজীবীদের জন্য উন্নত কর্ম পরিবেশ, সামাজিক সুবিধা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান।
সাইপ্রাস কোন কাজের চাহিদা বেশি:
সাইপ্রাস পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এটি ভূমধ্যসাগরের তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ। এটি গ্রিস, তুরস্ক এবং লেভান্ট অঞ্চলের মাঝে অবস্থিত। পাহাড়, সমুদ্রতীর এবং বনাঞ্চল দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উল্লেখযোগ্য অংশ। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি অর্থনীতিও বেশ সমৃদ্ধ।
দেশটির অর্থনীতি প্রধানত পরিষেবা খাত, পর্যটন এবং জাহাজ চলাচল শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তবে পর্যটন হলো দেশটির প্রধান আয়ের উৎস। তবে অন্যান্য খাত গুলোকেও অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। তাই প্রতিটি সেক্টরেই বাংলাদেশীদের কাজের একটি ভালো সুযোগ রয়েছে। সাইপ্রাসে সাধারণত যে কাজ গুলোর চাহিদা বেশি সেগুলো হলো:
পর্যটন এবং আতিথেয়তা:
সাইপ্রাস পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির একটি দেশ। তাই এখানকার হোটেল, রিসোর্ট এবং রেস্তোরাঁয় গুলোতে বাংলাদেশীদের জন্য কাজের প্রচুর সুযোগ রয়েছে। আর গ্রীষ্মকালে যেহেতু এই খাতটি ব্যপকভাবে ব্যস্ত থাকে। সেহেতু এই সময় ভালো উপার্জনের একটি বিশেষ চান্স থাকে।
অর্থনীতি ও ফিনটেক:
সাইপ্রাস হলো একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও আর্থিক কেন্দ্র। তাই অ্যাকাউন্টিং, অডিটিং, এবং ফিনটেক এই সেক্টর গুলোতে অভিজ্ঞ এবং দক্ষ পেশাজীবীদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি এই সেক্টর গুলোতে দক্ষ হয় তাহলে এটি আপনার জন্য একটি সুযোগ হতে পারে।
জাহাজ চলাচল ও লজিস্টিকস:
সাইপ্রাসের অর্থনীতি একটি বড় অংশ জাহাজ চলাচলের উপর নির্ভরশীল। যেহেতু এটি অনেক বড় একটি কর্মযজ্ঞ সেহেতু এখানে দক্ষ লোকের চাহিদাও ব্যাপক। তবে এ সেক্টরে দক্ষ অদক্ষ উভয় ধরনের লোকেরই ভালো চাহিদা রয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি:
শুধু সাইপ্রাস নয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ লোকের চাহিদা পুরো পৃথিবীতেই ব্যাপক। সাইপ্রাসও এর ব্যতিক্রম নয়। সাইপ্রাসে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আইটি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে দক্ষ কর্মীদের জন্য একটি বিশাল কর্ম বাজার রয়েছে।
কৃষি ও নির্মাণ কাজ:
উপরের খাত গুলোতে কমবেশি দক্ষ লোকের চাহিদা থাকলেও কৃষি ও নির্মাণ কাজ এই দুই খাতে অদক্ষ বা আধা-দক্ষ কর্মীরাও খুব সহজেই কাজ পায়ে যায়। আর যেহেতু আমরা দুই খাতের সাথে মোটামুটি পরিচিত তাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া লোকদের জন্য এই কাজ গুলো করতে তেমন কোন সমস্যাও হয় না।
সাইপ্রাস দেশ কেমন?
সাইপ্রাস ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত (গ্রীস সাইপ্রাস) একটি দ্বীপরাষ্ট্র। যদিও এটি ভৌগোলিকভাবে এশিয়ার খুব কাছাকাছি অবস্থিত। তবে সাইপ্রাসকে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে ইউরোপের অংশ হিসেবেই গণ্য করা হয়। এশিয়া মহাদেশের কাছাকাছি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে কাজ করতে যাওয়ার জন্য সাইপ্রাস একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য । তবে এটি নির্ভর করে আপনার দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের চাহিদার উপর।
কাজ করতে যাওয়ার জন্য সাইপ্রাস মূলত দুই ধরণের ভিসা অনুমোদন করে : ১) General Employment Visa (শ্রমিক বা সাধারণ চাকরির জন্য) ২) Specialised Employment Visa (পেশাজীবীদের জন্য)। আপনি আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে এর যে কোন একটি ধরন নির্বাচণ করতে পারেন।
সাইপ্রাসের বেতন এবং কাজের সুবিধাও বেশ সন্তোষজনক৷ সাইপ্রাসে কাজের বেতন মূলত আপনি কোন খাতে কাজ করছেন এবং সেই খাতে আপনার দক্ষতা কেমন তার উপর নির্ভরশীল। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানই করে থাকে, বিশেষ করে পর্যটন খাতে।
থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান না করলেও কাজ করতে যাওয়ার জন্য সাইপ্রাস একটি ভালো চয়েস। কারণ এখানকার জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলকভাবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের চেয়ে কম। এখানে আপনি অল্প টাকার মধ্যেই বাসা ভাড়া পেয়ে যাবেন। এখানে খাবার, যাতায়াত খরচও কম।
সাইপ্রাসে কাজের পরিবেশও মোটামুটি ভালো এবং পেশাদার বলা চলে। আর এখানে যেহেতু প্রায় লোকই ইংরেজি ভাষায় দক্ষ, তাই তাদের সাথে যোগাযোগ করাও বেশ সহজ হয়। আর সাইপ্রাসের ওয়ার্কিং টাইম হচ্ছে সাধারণত সপ্তাহে ৫ দিন, দিনে ৮ ঘণ্টা। তবে পর্যটন বা কৃষি খাতে যদি আপনি যুক্ত থাকেন তাহলে এই সময়ের চেয়ে বেশি সময় কাজ করতে হতে পারে। তবে তার জন্য আপনি একটি ভালো পেমেন্ট পাবেন৷
সাইপ্রাসে গেলে আপনি একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পাবেন এটা মোটামুটি নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়। তবুও, দেশটিতে কাজ করতে যাওয়ার আগে কাজের পরিবেশ, খরচ এবং জীবনযাত্রার বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: তুর্কি সাইপ্রাস কেমন দেশ ২০২৫
সাইপ্রাসের টাকার মান:
অফিশিয়াল ভাবে সাইপ্রাসের মুদ্রার নাম হচ্ছে ইউরো। তবে তুর্কি সাইপ্রাসে তুর্কিস লিরা ব্যবহৃত হয়। সাইপ্রাসের টাকার মানের ক্ষেত্রে তুর্কি সাইপ্রাস টাকার মান এবং সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রের টাকার মানের বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। যেমন বর্তমানে সাইপ্রাস ১ টাকা বাংলাদেশের টাকা ১৩১.৮৪ টাকা। অপর দিকে তুর্কি সাইপ্রাস ১ টাকা বাংলাদেশের ৩.২১ টাকা। বাজারের উপর ভিত্তি করে এই রেট কিছুটা কম বেশি হতে পারে।
সাইপ্রাসের ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা?
সাইপ্রাসের অফিশিয়াল মুদ্রা ইউরো হলেও সাইপ্রাসে ইউরো এবং লিরা দুই মুদ্রাই ব্যবহৃত হয়। তাই সাইপ্রাসের ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা এটি নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। কারণ ইউরোর সাপেক্ষে এটি একরকম হবে আবার লিরার সাপেক্ষে অন্য রকম হবে।
যদি সাইপ্রাসের মুদ্রাকে ইউরো ধরি তাহলে বর্তমান আন্তর্জাতিক মুদ্রা রেট অনুসারে সাইপ্রাসের ১ টাকা বাংলাদেশের ১৩১ টাকা ৮৪ পয়সা। আর যদি সাইপ্রাসের মুদ্রা লিরা ধরেন তাহলে আজকের মুদ্রারেট অনুসারে সাইপ্রাসের ১ টাকা বাংলাদেশের ৩ টাকা ২১ পয়সা।
উল্লেখ্য যে, নর্থ সাইপ্রাস বা তুর্কি সাইপ্রাসে ব্যবহৃত হয় লিরা এবং গ্রীস বা গ্রিক সাইপ্রাসে ব্যবহৃত হয় ইউরো।
সাইপ্রাসে কাজের সুযোগ সুবিধা:
সাইপ্রাসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কর্ম পরিবেশ কিছুটা মিশ্র। দেশটিতে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের নিয়োগ দিয়ে থাকে, বিশেষ করে নির্মাণ, পর্যটন, এবং কৃষির মতো শিল্পে।
কাজের সুযোগ:
সাইপ্রাসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কাজের সুযোগ তুলনামূলক ভাবে ভালো। সাইপ্রাসে বিভিন্ন খাতে যেমন নির্মাণ, কৃষি, এবং হোটেল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিতে কাজের বেশ ভালো সুযোগ রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট খাতে বিশেষ দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা একটু বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন।
শ্রমিকদের অধিকার:
দেশটিতে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করার জন্য বেশ কার্যকর কিছু আইন রয়েছে। যা বাংলাদেশী শ্রমিক সহ বিদেশি শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত করে। এছাড়াও নিয়োগকর্তারা নিয়মিতভাবে বিদেশী শ্রমিকদের জন্য আইনগত এবং সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করে থাকেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ হয় না। যার ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং বেতন সংক্রান্ত কিছু সমস্যা তৈরি হয়ে থাকে।
ভিসা এবং আইন:
সাইপ্রাসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া কিছুটা জটিল। তবে অসম্ভব বা অসাধ্য কিছু নয়। সাইপ্রাসে সাধারণত সরাসরি নিয়োগকর্তার মাধ্যমে ভিসা পাওয়া যায়। তাই ভিসার জন্য সরাসরি নিয়োগকর্তার মাধ্যমে ভিসা আবেদন করতে হয়, যা কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
সংস্কৃতি এবং পরিবেশ:
আপনি বন্ধুত্বপূর্ন স্বভাবের হলে সাইপ্রাসের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে খুব দ্রুত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। তবে ভাষা এবং সাংস্কৃতিগত কিছু পার্থক্যের কারণে এটি অনেকের ক্ষেত্রে কারো কারো জন্য বেশ কঠিনও হতে পারে। তবে সাধারণত সাইপ্রাসের স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে বাংলাদেশীদের কিছুটা সময় লাগে। তবে ইংরেজি ভাষার জ্ঞান থাকলে এ কাজটি অনেক সহজেই হয়ে যায়।
সর্বোপরি বলা যায়, সাইপ্রাসে বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য কাজের বেশ ভালোই সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তবে সাইপ্রাস হোক বা অন্যদেশ নিজেদের অধিকার এবং জীবনযাত্রার মান নিয়ে সব সময় সতর্ক থাকা উচিত।
সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগে?
বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যাওয়ার বিষয়টি সাধারণত বিভিন্ন এজেন্সিরাই ডিল করে থাকে। আর এজেন্সি গুলো যেহেতু প্রায় স্বাধীন ভাবেই যাওয়ার খরচ নির্ধারন করে থাকে তাই সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগে এটা নিশ্চিত করে বলা কিছুটা মুশকিল। কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দালাল এবং আলাদা আলাদা এজেন্সি কারণে সাইপ্রাস যাওয়ার খরচ আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
ক্ষেত্র বিশেষে এই পার্থক্যটি বেশ বড় সর ভাবেও দেখা যায়। তবে সাধারণ ভাবে বলা যায় বাংলাদেশ থেকে সাইপ্রাস যেতে দালাল এবং আনুসাঙ্গিক খরচ সহ মোটামুটি ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে। এই খরচ মূলত বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে কম বেশি হতে পারে।
আরও পড়ুন: গ্রিক সাইপ্রাস যেতে কত টাকা লাগে ২০২৫
সাইপ্রাস থেকে অন্য দেশে যাওয়ার উপায়:
তুর্কি সাইপ্রাস বলেন আর গ্রীস সাইপ্রাস বলেন কোন সাইপ্রাসই শেনজেন ভুক্ত দেশ নয়। যার ফলে আপনি সাইপ্রাসের ভিসা দিয়ে সরাসরি বৈধ্য উপায়ে ইউরোপের মূল স্ট্রীম দেশ অর্থাৎ ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি যেতে পারবেন না। যদিও বৈধ্য ভাবে এদেশ গুলোতে যাওয়ার সীমিত কিছু উপায় রয়েছে তাবে তা বেশ জটিল।
তবে সাইপ্রাস শেনজেন ভুক্ত হাওয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি ভবিষ্যতে সাইপ্রাস শেনজেন ভুক্ত হয় তাহলে আপনি সরাসরি সাইপ্রাসের ভিসা দিয়ে ইউরোপের শেনজেন ভুক্ত দেশ গুলোতে সহজেই যেতে পারবেন। কিন্তু বর্তমানে এটি বৈধ্য উপায়ে সম্ভব নয় বললেই চলে।
তবে সাইপ্রাস থেকে অবৈধ্য কিছু মাধ্যম ব্যবহার করে ইউরোপের মূল স্ট্রীম দেশ গুলোতে যাওয়া যায়। তবে এভাবে যাওয়ার পদ্ধতি যেহেতু বৈধ্য নয় সেহেতু এখানে এটি নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে আপনি ইউটিউব অথবা ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপের সাহায্য নিতে পারেন। তবে আপনি চাইলে সাইপ্রাস থেকে সহজে তুরস্ক বা গ্রীস যেতে পারবেন।
শেষ কথা :
সাইপ্রাসের ইতিহাসে প্রাচীন কাল থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিভিন্ন সভ্যতার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন গ্রীক, রোমান এবং অক্সিডেন্টাল। সাইপ্রাসে প্রাচীন সব মন্দির, প্যালেস এবং স্থাপত্যের নিদর্শন আজও বিদ্যামান। সাইপ্রাসের একটি চমৎকার নগর হচ্ছে নিকোসিয়া, যা দ্বীপটির রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কেন্দ্র। ইতিহাস ঐতিহ্যের মত দেশটির কর্ম পরিবেশও বেশ চমৎকার। সাইপ্রাসে কাজ করে বাংলাদেশীদের তুলনামূলক অনেক বেশি বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে সাথে খরচ ও জীবনযাত্রার মানও মাথায় রাখতে হবে। এই ছিল আমাদের "সাইপ্রাস বেতন কত? কাজের সুযোগ সুবিধা কেমন" নিয়ে আজকের আলোচনা।