বুলগেরিয়া বেতন কত? কাজের সুবিধা অসুবিধা ২০২৪

বুলগেরিয়া দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ, যা বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত। বর্তমানে বুলগেরিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। দেশটির অর্থনীতি কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবার খাতের ব্যাপকভাবে উপর নির্ভরশীল। বুলগেরিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ হলেও এখানে বিদেশী শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ কিছুটা মিশ্র। দেশটিতে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য যেমন আকর্ষনীয় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে, তেমনি কর্মক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জও রয়েছে। তাই আপনি যদি বুলগেরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে এই আলোচনাটি আপনার জন্য বেশ সহায়ক হতে পারে৷ এই আলোচনায় আমরা বুলগেরিয়ায় বেতন কত? বুলগেরিয়া কাজের ভিসা ২০২৪ এবং বুলগেরিয়ার কর্ম পরিবেশ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো।

আরও পড়ুন : পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে গামকা মেডিক্যাল রিপোর্ট চেক ২০২৪

বুলগেরিয়া বেতন কত?

বুলগেরিয়া সর্বনিম্ন বেতন কত? 

বুলগেরিয়ার মুদ্রার নাম হচ্ছে লেভ। যেটি ডলারের চেয়ে কিছুটা দূর্বল হলেও বাংলাদেশী টাকার চেয়ে বেশ শক্তিশালী। বর্তমানে এক বুলগেরিয়ান লেভ সমান ৬৭ বাংলাদেশী টাকা। সুতরাং আপনি যদি কাজের উদ্দেশ্যে বুলগেরিয়া যান তাহলে বেশ ভালো এমাউন্টের একটি মাসিক বেতন পাবেন এটা নিশ্চিত। 

তবে বুলগেরিয়ায় নির্দিষ্ট কত টাকা বেতন সেটা বলা কিছুটা মুশকিল। কারণ বেতন বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। কৃষি খাতে বেতন এক রকম আবার শিল্প খাতে বেতন অন্য রকম৷ তাই বুলগেরিয়া সর্বনিম্ন বেতন বা সর্বোচ্চ বেতন কত সেটা বলা কিছুটা কষ্টকর। তবে এভারেজে আপনি সর্বনিম্ন প্রায় ৭০০ বুলগেরিয়ান লেভ এবং সর্বোচ্চ প্রায় ১২০০ বুলগেরিয়ান লেভ বেতন পেতে পারেন। যা বাংলাদেশী টাকায় দাঁড়াবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা৷  

তবে যেহেতু কাজের ধরণের উপর সাধারণত বেতন নির্ভর করে সেহেতু এক নজরে বুলগেরিয়ায় বিভিন্ন সেক্টরে কাজের সম্ভাব্য বেতন গুলো দেখে নেওয়া যাক :

  • কন্সট্রাকশন সেক্টরে কাজের বেতন : কন্সট্রাকশন সেক্টরে কাজের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বেতন হচ্ছে ৫৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার বাংলাদেশী টাকা।
  • রেস্টুরেন্ট সেক্টরে কাজের বেতন : রেস্টুরেন্ট সেক্টরে কাজের সম্ভাব্য বেতন হচ্ছে ৬০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার বাংলাদেশী টাকা। 
  • কৃষি সেক্টরে কাজের বেতন : কৃষি সেক্টরে কাজের জন্য সম্ভাব্য বেতন পাবেন ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার বাংলাদেশী টাকা। 
  • ডেলিভারি/ড্রাইভিং সেক্টরে বেতন : ডেলিভারি বা ড্রাইভিং সেক্টরে কাজের  সম্ভাব্য বেতন হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার বাংলাদেশী টাকা। 

বুলগেরিয়ায় কাজের সুযোগ সুবিধা: 

বুলগেরিয়ায় কাজ করার যেমন সুযোগ সুবিধা রয়েছে তেমন কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। আপনি যদি বুলগেরিয়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনাকে এই সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে। 

নিম্ন জীবনযাপন খরচ:

বুলগেরিয়ায় কাজ করতে আসার সব চেয়ে বড় সুবিধা গুলোর মধ্যে একটি হলো জীবনযাত্রার ব্যয়। বুলগেরিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক কম। যা বাংলাদেশদেশী শ্রমিকদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় একটি দিক।

ভিসা প্রাপ্তি:

ইউরোপের অন্যন্য দেশের তুলনায় বুলগেরিয়ায় কাজের ভিসা পাওয়া তুলনা মূলক কিছুটা সহজ। বুলগেরিয়ায় বিদেশী শ্রমিকদের জন্য ওয়ার্ক ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ সুযোগ সুবিধা রয়েছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও কৃষি খাতে।

চাহিদা:

দক্ষ জনশক্তির চাহিদা সব দেশেই বেশি।  বুলগেরিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়৷ বুলগেরিয়ায় দক্ষ জন শক্তির ব্যপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে নির্মাণ, তথ্য প্রযুক্তি এবং পর্যটন খাতে বিদেশী শ্রমিকদের অনেক চাহিদা। আপনি যদি এই সেক্টর গুলোতে দক্ষ হোন তাহলে বুলগেরিয়া কাজ করতে যাওয়ার জন্য আপনার একটি সেরা চয়েস হইতে পারে। 

বুলগেরিয়ায় কাজের অসুবিধা:

প্রায় সব দেশেই বাহিরে থেকে কাজ করতে গেলে কিছু প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। তবে সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে গেলে যেকোন দেশেই একটি ভালো কর্মজীবন গড়া সম্ভব। তাই বুলগেরিয়ায় কাজ করতে গেলে এই অসুবিধাগুলো পূর্ব প্রস্তুতি রাখা জরুরি।

ভাষা :

বুলগেরিয়ায় কর্মক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষ বুলগেরিয়ান ভাষায় কথা বলে। যা বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য ভালো অন্ডারসেন্ডিংয়ে একটি বাধা হতে পারে। তবে তাদের সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করার পর ধীরে ধীরে এই প্রতিবন্ধকতা অটোমেটিক দূর হয়ে যায়। 

তুলনা মূলক কম বেতন : 

ইউরোপের অন্যন্য দেশের তুলনায় বুলগেরিয়ায় কাজের বেতন কিছুটা কম। তবে জীবন যাত্রার ব্যয় বিবেচনা করলে এই বেতনকে কম বলাও সুযোগ নেই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশী শ্রমিকদের চেয়ে স্থানীয় শ্রমিকদের বেতন তুলনায় কিছুটা বেশি হতে পারে। এটি মূলত কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে হয়ে থাকে।

কর্ম পরিবেশ : 

কর্ম পরিবেশ ইউরোপের সব দেশ গুলোতেই প্রায় একই। তবে কিছু কাজের ক্ষেত্রে কর্ম পরিবেশ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় তেমন সুবিধাজনক নাও হতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে শ্রম আইনগুলি সেগুলো যথাযথভাবে নাও অনুসরণ করতে পারে। তবে এটি নিয়ে খুব বেশি উদ্বীগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কারণ ইউরোপীয় দেশ গুলো শ্রম আইন নিয়ে বেশ সচেতন। 

শেষ কথা :

বুলগেরিয়ার ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ একটি দেশ। প্রাচীন থ্রেশিয়ান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ, রোমান যুগের স্থাপনা এবং মিডল এজের রাজ্যগুলির প্রমাণ এখনও এখানে দেখা যায়। দেশটি প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন সুন্দর তেমনি সেখানকার কর্ম পরিবেশটাও অনেক সুন্দর। তবে অন্যান্য সকল দেশের মতই বুলগেরিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য যেমন কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এই ছিল মোটামুটি বুলগেরিয়া বেতন কত? কাজের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা। 

Next Post Previous Post