বুলগেরিয়া বেতন কত? কাজের সুবিধা অসুবিধা ২০২৫

This Template Designed By E10Script

বুলগেরিয়া দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপের একটি দেশ। বলকান উপদ্বীপে অবস্থিত দেশটি বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সেনজেন ভুক্ত । তবে বুলগেরিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশ হলেও এখানে বিদেশি শ্রমিকদের বেতন নিয়ে কিছুটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বেতনের বিষয় একটু বিবেচনায় নিলে দেশটিতে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য আকর্ষনীয় সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে। তাই যারা যদি বুলগেরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন আশা করছি এই আলোচনাটি তাদের জন্য বেশ সহায়ক হবে ইনশাল্লাহ৷ এই আলোচনায় আমরা বুলগেরিয়ায় বেতন কত? বুলগেরিয়া কাজের ভিসা ২০২৫ এবং বুলগেরিয়ার কর্ম পরিবেশ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবো।

আরও পড়ুন : 

বুলগেরিয়া বেতন কত?

বুলগেরিয়া সর্বনিম্ন বেতন কত? 

বুলগেরিয়ার মুদ্রার নাম হচ্ছে লেভ। যেটি ডলারের চেয়ে কিছুটা দূর্বল হলেও বাংলাদেশী টাকার চেয়ে বেশ শক্তিশালী। বর্তমানে এক বুলগেরিয়ান লেভ সমান ৬৭ বাংলাদেশী টাকা। বুলগেরিয়ায় আপনি কাজের বেতন সেদেশের মুদ্রা লেভেই পাবেন। তবে হিসাবের সুবিধার জন্য আমরা এখানে বুলগেরিয়ার বেতন ইউরো এবং বাংলাদেশি টাকা তে বলার চেষ্টা করবো । 

আরও পড়ুন: সার্বিয়া কি সেনজেন হবে

বুলগেরিয়ায় আপনি কত টাকা বেতন পাবেন সেটা বলা কিছুটা মুশকিল। কারণ বেতন বিভিন্ন খাত, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি ভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তাই কন্সট্রাকশন কাজে সর্বনিম্ন বেতন এক রকম আবার ফ্যাক্টরি কাজে বেতন আরেক রকম৷ তাই বুলগেরিয়া সর্বনিম্ন বেতন বা সর্বোচ্চ বেতন কত সেটা বলা কিছুটা কষ্টকর। তবে এভারেজে আপনি সর্বনিম্ন প্রায় ৪৮০ ইউরো থেকে ৫৫০ ইউরো বেতন পেতে পাবেন। যা বাংলাদেশী টাকায় দাঁড়াবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা৷  

বুলগেরিয়ায় বাংলাদেশিরা যেসব কাজ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টেক্সটাইল ফ্যাক্টরির কাজ, কটন ফ্যাক্টরির কাজ, কন্সট্রাকশনের রিলেডেট কাজ, ওয়ার হাউজ এবং লিজিস্টিক রিলেটেড কাজ, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, ওয়েল্ডার, হেভি ভিক্যাল ড্রাইভার, বিভিন্ন মেশিন অপারেটর, কার পেন্টার, অটোমোটিভ টেকনিশিয়ান, HVAC এর কাজ ইত্যাদি।  

এই কাজ গুলোর বেতন প্রায় একই বলা যায়। কাজ ভেদে বেতনে সামান্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। তবে আপনাদের সুবিধার জন্য প্রতিটি সেক্টরের বেতন এখানে আলাদা আলাদা ভাবে দেখানো হলো:-

  • কন্সট্রাকশন রিলেটেড কাজের বেতন: কন্সট্রাকশন রিলেটেড কাজ গুলোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য বেতন হচ্ছে ৪৮০ ইউরো থেকে ৬০০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় ৬০ হাজার বাংলাদেশি টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা।
  • ইলেকট্রিক্যাল সেক্টরে কাজের বেতন: ইলেকট্রিক্যাল সেক্টরের কাজের কাজ গুলোর সম্ভাব্য বেতন হচ্ছে ৫০০ ইউরো থেকে ৬০০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৬৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা।
  • টেক্সটাইল ও কটন ফ্যাক্টরির কাজের বেতন: টেক্সটাইল ও কটন ফ্যাক্টরি গুলোতে কাজের সম্ভাব্য বেতন হচ্ছে ৫০০ ইউরো থেকে ৫৫০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৬৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা। 
  • ড্রাইভিং সেক্টরে বেতন: ট্রাসপোর্টের জন্য ভারি যান চালানোর অভিজ্ঞতা এবং লাইসেন্স থাকলে এই সেক্টরে কাজের  ভালো বেতন পাবেন। এই সেক্টরে সম্ভাব্য বেতন হচ্ছে ৬০০ ইউরো থেকে ৭৫০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৭৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা থেকে ৯৫ হাজার টাকা। 
  • অটোমোটিভ, HVAC, এসি এবং মেশিন অপারেটর কাজের বেতন: অটোমোটিভ টেকনিশিয়ান, HVAC, এসি এবং মেশিন অপারেটর এই কাজ গুলোর সম্ভাব্য বেতন হচ্ছে ৫৫০ ইউরো থেকে ৬৫০ ইউরো। বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকা।

বুলগেরিয়ায় কাজের সুযোগ সুবিধা: 

বুলগেরিয়ায় কাজ করার যেমন কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে তেমন কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। আপনি যদি বুলগেরিয়ায় ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনাকে এই সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে। 
বুলগেরিয়ায় কাজের সুযোগ সুবিধা

জীবনযাপন খরচ:

আপনারা ইতোমধ্যে জেনেছেন যে বুলগেরিয়ায় কাজের বেতন তুলনামূলক ভাবে কম। যে কারণে বুলগেরিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয়ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অনেক কম। যা বাংলাদেশদেশী কর্মী জন্য বেশ আকর্ষণীয় এবং সুবিধাজনক একটি দিক।

ভিসা প্রাপ্তি:

ইউরোপের অন্যন্য দেশের তুলনায় বুলগেরিয়ায় ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া তুলনা মূলক অনেক সহজ। বুলগেরিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ওয়ার্ক ভিসা রেশিও অনেক ভালো। পূর্বে এটি মোটামুটি ১০০% ই ছিল। কিছু সম্প্রতি সময়ে এজেন্সি গুলো ফেক ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে ফাইল জমা দেওয়ার কারণে ভিসা রেশিও আগের তুলনায় কিছুটা কমেছে। তবে এখন পর্যন্ত এটি সন্তোষজনকই বলা যায়।

চাহিদা:

দক্ষ জনশক্তির চাহিদা পৃথিবীর সব দেশেই বেশি। বুলগেরিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়৷ বুলগেরিয়ায় দক্ষ জন শক্তির ব্যপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য আইটি রিলেটেড কাজে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশটি তুলনামূলক কিছু কম উন্নত হলেও এদের আইটি সেক্টর মোটামুটি উন্নত বলা যায়। 

যে কারমে খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। আপনি যদি এই সেক্টর দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে বুলগেরিয়া কাজ করতে যাওয়ার জন্য আপনার একটি সেরা চয়েস হইতে পারে। এটি ছাড়াও অদক্ষ এবং অনভিজ্ঞ কর্মীদেরও অন্যান্য সেক্টরে ভালো চাহিদা রয়েছে।

কর্ম পরিবেশ: 

কর্ম পরিবেশ ইউরোপের সব দেশ গুলোতেই প্রায় একই। এখানে আপনাকে সপ্তাহে ৫ দিন দিনে ৮ ঘন্টা করে সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা কাজ করতে হবে। সপ্তাহে ছুটি দুই দিন। ওভার টাইমের যদিও সুযোগ রয়েছে। তবে ওভার টাইম খুব কম পাবেন। হয়তো ১ সপ্তাহ বা ২ সপ্তাহ পর ওভার টাইম পাবেন। আর এখানে থাকা পুরোটা কোম্পানির আর খাওয়া অর্ধেক আপনার বাকি অর্ধেক কোম্পানির। 

বুলগেরিয়ায় কাজের অসুবিধা:

প্রায় সব দেশেই বাহিরে থেকে কাজ করতে গেলে কিছু অসুবিধা ফেস করতে হয়। বুলগেরিয়ায় কাজের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান অসুবিধা হলো বেতন। ইউরোপের অন্যন্য দেশের তুলনায় বুলগেরিয়ায় কাজের বেতন কিছুটা কম। যদিও জীবন যাত্রার ব্যয় এবং ট্যাক্স বিবেচনা করলে এই বেতনকে কম বলারও তেমন সুযোগ নেই। কারণ কাজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আপনি এখানে ১০০০ ইউরো পর্যন্ত বেতন পেতে পারেন। তবে নতুন এবং অদক্ষ কর্মীদের বেতন তুলনামূলক কিছুটা কম। 

শেষ কথা:

বুলগেরিয়ার ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় একটি দেশ। যেহেতু দেশটি নতুন সেনজেনে প্রবেশ করেছে সেহেতু দেশটি ধীরে ধীরে ব্যাপক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। তখন হয়তো বেতনের সমস্যাটিও দূর হতে পারে। তবে বর্তমানে অন্যান্য সকল দেশের মতই বুলগেরিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য যেমন কিছু সুযোগ সুবিধা রয়েছে তেমনি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এই ছিল মোটামুটি বুলগেরিয়া বেতন কত? কাজের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা। 
Sazzadul Islam

আমি সাজ্জাদুল ইসলাম৷ দীর্ঘ সময় থেকে পাসপোর্ট, ভিসা এবং প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করছি৷ সে অভিজ্ঞতার আলোকে এখানে নিয়মিত পাসপোর্ট, ভিসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমসাময়িক তথ্য ও আপডেট দেওয়ার চেষ্টা করি।

Post a Comment

Previous Post Next Post
This Template Designed By E10Script