ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম অনলাইন ২০২৫

This Template Designed By E10Script

বিদেশ যাত্রার জন্য অপরিহার্য একটি ডকুমেন্ট হলো পাসপোর্ট। বর্তমানে দেশ ডিজিটালাইজেশনের ফলে ম্যানুয়াল পাসপোর্টকে ই-পাসপোর্ট রুপান্তর করা হয়েছে। আর ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ই-পাসপোর্টে রুপান্তর হওয়াই সবচেয়ে বড় সুবিধা হয়েছে এর আবেদন পক্রিয়ায়। এখন দেশে বা দেশের বাহিরে থেকে যে কোন বাংলাদেশী নাগরিক ঘরে বসেই নিজের কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অনলাইনে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবে। আর এই আবেদন পক্রিয়ায় থাকছে না কোন কাগজ সত্যায়ন এবং ছবি তোলার ঝামেলা। আর সেই ধারাবাহিকতায় এই আলোচনায় আমরা অনলাইনে পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার চেষ্টা করব। চলুন তাহলে কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক।

সম্পর্কিত পোস্ট : পাসপোর্ট রিনিউ বা নবায়ন করার নিয়ম ২০২৫

ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম

ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম:

ম্যানুয়াল পাসপোর্টের মত ই-পাসপোর্টেও দুই ধরণের পাসপোর্ট সেবা চালু রাখা হয়েছে। প্রথমটি হলো ৫ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এবং দ্বিতীয়টি হলো ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট। গ্রাহক তার প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন এক মেয়াদি পাসপোর্ট নির্বাচন করতে পারবেন। আবার কেউ চাইলে ৫ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট কে ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টে আপগ্রেড করতে পারবেন। আপনি যদি ১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট করার পরিকল্পনা করেন তাহলে আমাদের এই পোস্টটি দেখতে পারেন ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট আবেদন

ই পাসপোর্ট একাউন্ট খোলার নিয়ম:

ই-পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য প্রথমেই ই পাসপোর্টের ওয়েব সাইটে আপনার একটি একাউন্ট খুলে নিতে হবে। আপনার যদি পূর্বে থেকেই ই-পাসপোর্ট সাইটে একাউন্ট করা থাকে তাহলে সরিসরি লগইন করে আপনি ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন। আর যদি পূর্বে থেকে আপনার ই-পাসপোর্ট সাইটে কোন একাউন্ট না থেকে থাকে তাহলে নতুন করে একাউন্ট খুলে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে।

প্রথমে আপনাকে ই পাসপোর্ট সাইটের অফিশিয়াল লিংক "https://www.epassport.gov.bd/" এ প্রবেশ করতে হবে। তারপর সাইটটি সম্পূর্ন ওপেন হলে মেনু আপশন থেকে Apply Online -এ ক্লিক করতে হবে। অথবা হোম পেজের Apply Onlie for e-Passport/Re-Issue বক্স থেকে Directly to Online Application বাটনে ক্লিক করতে হবে।

আরও পড়ুন: পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৫

ই-পাসপোর্ট আবেদন পেজ

  • পরবর্তী পেজের স্টেপ-১ এ আপনি বাংলাদেশ থেকে আবেদন করছেন কিনা সেটি জানতে চাওয়া হবে। আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে এপ্লাই করেন তাহলে Yes সিলেক্ট করবেন। আর যদি দেশের বাহিরে থেকে অবেদন করলে No সিলেক্ট করবেন। Yes সিলেক্ট করলে নিচে আপনার বর্তমান জেলা এবং নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন সিলেক্ট করতে বলা হবে। আর যদি দেশের বাহিরে অবস্থান করেন তাহলে সেইক্ষেত্রে No সিলেক্ট করে যে দেশে অবস্থান করছেন সেটি সিলেক্ট করে Continue বাটনে ক্লিক করবেন।
  • পরবর্তী পেজের স্টেপ-২ তে আপনাকে একটি ইমেল এড্রেস ইন্টার করতে বলা হবে। সেখানে আপনার ইমেল এড্রেসটি দিয়ে ক্যাপচা পুরণ করে Continue বাটনে ক্লিক করবেন।
  • পরের পেজের স্টেপ-3 তে ৬ ডিজিটের একটি পাসওয়ার্ড, আপনার ফুল নাম এবং ফোন নাম্বার দিয়ে ক্যাপচা পূরণ করে Create Account বাটনে ক্লিক করবেন। পাসপোর্টে নাম ঠিকানা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সব সময় নাম ও ঠিকানা ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে দিবেন। 

এরপর তারা আপনার ইমেইলে একটি ভেরিফিকেশন লিংক পাঠিয়ে দিবে। আপনার ইলেম থেকে সেই লিংকে ক্লিক করলেই আপনার ই-পাসপোর্টের জন্য একাউন্ট খোলা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন:

আপনার ই-পাসপোর্টের জন্য একাউন্ট খোলা সম্পন্ন হয়ে গেলে Sign in বাটনে ক্লিক করে ইমেল এড্রেস এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্টটি Sign in করে নিবেন।

তারপর Apply Online for e-Passport -এ ক্লিক করে পাসপোর্ট টাইপ সিলেক্ট করবেন। আপনি যদি সরকারি চাকরিজীবী হন তাহলেই কেবল Official Passport সিলেক্ট করবেন। অন্যথায় Ordinary Passport সিলেক্ট করবেন। পাসপোর্ট টাইপ সিলেক্ট করা হয়ে গেলে Save and Continue বাটনে ক্লিক করবেন।

এরপর পাসপোর্টের আবেদনটি যদি নিজের জন্য করতে চান তাহলে Personal Information থেকে Apply for myself ঘরে টিক মার্ক দিয়ে দিন। অন্যথায় টিক দেওয়ার প্রয়োজন নেই। টিক মার্ক দেওয়ার সাথে সাথে নিচে আপনার নাম, ফোন নাম্বার অটোমেটিক পূরন হয়ে যাবে। কারণ এই ইনফরমেশন গুলো আপনি একাউন্ট খোলার সময় দিয়েছিলেন। বাকি লিঙ্গ, ধর্ম, জন্ম তারিখ সহ বাকি তথ্য ফিলআপ করে Save and Continue বাটনে ক্লিক করবেন।

পরবর্তী পেজে আপনার বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা পূরন করুন। স্বায়ী ঠিকানা অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসারে হতে হবে। এরপর Save and Continue বাটনে ক্লিক করবেন।

এই অংশে আপনি যদি নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন তাহলে 'No, I don't have any previous passport/hand written passport' সিলেক্ট করুন। আর যদি আপনার আগে থেকেই ই-পাসপোর্ট বা এমআরপি থেকে থাকে তাহলে সেটি সিলেক্ট করবেন। এর একটু নিচে আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার দিতে বলা হবে। আপনি সেখানে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার দিয়ে Save and Continue বাটনে ক্লিক করবেন।

পরবর্তী পেজে আপনার পিতার মতার তথ্য চাওয়া হবে। পিতা মাতার তথ্য পূরন করার সময় অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রে যেভাবে আছে সেভাবে পূরণ করবেন। তথ্য যথাযথ ভাবে পূরন করা হলে Save and Continue বাটনে ক্লিক করবেন।

পরের পেজে Local Guardian's Name দিতে বলা হবে। এই অংশটি মূলত দত্তক নেওয়া সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যদি এটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় তাহলে এটি যথাযথ ভাবে পূরণ করে Save and Continue বাটনে ক্লিক করবেন। 

প্রযোজ্য না হলে কোন তথ্য না দিয়েই Save and Continue বাটনে ক্লিক করুন। এই অপশনটি মূলত শুরুর দিকে ছিল না পরবর্তীতে পরিবর্তন করে এটি আনা হয়েছে। 

পরবর্তী পেজে আপনার বিকল্প যোগাযোগ হিসাবে ইমারজেন্সি কন্টাক্ট পেজে যাকে যোগ করতে চান তার ডিলেইল তথ্য সঠিক ভাবে পূরন করে Continue বাটনে ক্লিক করবেন।

পরবর্তী পেজে আপনি কত বছরের জন্য এবং কত পেজের পাসপোর্ট নিতে চান সেটি সিলেক্ট করবেন। আপনি খুব বেশি ভ্রমণ না করলে ৪৮ পৃষ্টার পাসপোর্টই আপনার জন্য যথেষ্ট। তবে চেষ্টা করবেন সবসময় ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট নেওয়ার জন্য।

পরের পেজে আপনাকে এপোইনমেন্ট এবং পাসপোর্ট কত দিনের মধ্যে ডেলিভারি চান সেটি সিলেক্ট করতে হবে। সাধারণত ঢাকার বাহিরে পাসপোর্ট অফিসে এপোইনমেন্ট নেওয়ার প্রয়োজন হয়না। আর আপনি যত দিনের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারি চান সেটি সিলেক্ট করে Save and Continue বাটনে ক্লিক করবেন।

তথ্য দেওয়ার কাজটি মূলত আপনার শেষ। এবার এই পেজে আপনি যে যে তথ্য প্রদান করলেন তার একটি ওভার ভিউ আপনাকে দেখানো হবে। এখানে আপনার দেওয়ার সকল তথ্য ঠিক আছে কিনা তা ভালভাবে পরীক্ষা করে নিবেন। প্রয়োজনে দুই তিন বার তথ্য গুলো যাচাই করবেন। তারপর সকল তথ্য ঠিক থাকলে ডিক্লারেশন বক্সে টিক মার্ক দিয়ে Confirm and proceed to payment বাটনে ক্লিক করবেন।

এরপর অনলাইন বা অফলাইনে পেমেন্ট কমপ্লিট করে দিলেই আপনার আবেদনটি সম্পূর্ন হয়ে যা। 

আরও পড়ুন: পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৫

ই-পাসপোর্টের আবেদন ফি : 

ই পাসপোর্ট আবেদন ফি

ই পাসপোর্টের আবেদন ফি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের সাইটে বিস্তারিত একটি পোস্ট আছে আপনি চাইলে সেটি দেখে নিতে পারেন। 

শেষ কথা :

বর্তমানে ই-পাসপোর্টের আবেদন অতি সহজ একটি প্রক্রিয়া। তাই পাসপোর্ট করার জন্য ভীত হয়ে দালালের স্বরনাপন্ন হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আর আশা করছি "অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম" এই পোস্টটি পড়ে নিজে নিজেই ই পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবে। যদিও আমরা খুব সহজ ভাবেই এই পোস্টে সব কিছু বলার চেষ্টা করেছি। তবুও যদি আবেদন করতে ভয় পান বা আবেদন পক্রিয়া ঠিকমত না বুঝতে পারেন তাহলে এই পোস্ট আরো একবার পড়ুন। এবার নিশ্চিত আপনি একা একাই ই পাসপোর্টের আবেদন করতে পারবেন।

Imran Hossain

আমি ইমরান হোসেন৷ দেশের স্বনামধন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে এখন পাসপোর্ট, ভিসা এবং প্রবাসীদের নিয়ে কাজ করছি৷ যার মাধ্যমে অর্জিত যৎসামান্য জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা এখানে নিয়মিত শেয়ার করার চেষ্টা করি।

Post a Comment

Previous Post Next Post
This Template Designed By E10Script