কি কি পরিবর্তন করা হয়েছে ই পাসপোর্টে

নিরাপদ এবং ঝামেলা মুক্ত বিদেশ ভ্রমণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২২ জানুয়ারী ২০২০ সালে পৃথিবীর ১১৯ তম দেশ হিসাবে ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। ই-পাসপোর্ট কেবল মাত্র নিরাপদ এবং ঝামেলা মুক্ত বিদেশ ভ্রমণই নিশ্চিত করে না বরং পাসপোর্ট ধারীর ব্যক্তিগত তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করে। যার কারণে ই-পাসপোর্টে বেশ কিছু নিরাপত্তা ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ০৯ মার্চ ২০২৪ তারিখে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তর এক স্মারক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের বেশ কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে নিশ্চিত করেছে। এই আলোচনায় আমরা ই-পাসপোর্টের কি কি পরিবর্তন করা হয়েছে তা নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব। 

আরও পড়ুন : ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

কি কি পরিবর্তন থাকছে ই-পাসপোর্টে

কি কি পরিবর্তন করা হয়েছে ই-পাসপোর্টে :

১৯৭৩ সালে সর্ব প্রথম বাংলাদেশে পাসপোর্ট চালু করা হয়। এবং ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত হস্তলিখিত পাসপোর্ট প্রদান করা হয়। ২০১০ সালে দেশে প্রথম মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু করা হয়। যা নানাবিধ উন্নতি সাধনের মধ্য দিয়ে ২০২০ সালে ই পাসপোর্টে রূপান্তর হয়। তবে এটিকে আরো উন্নত এবং নিরাপদ করার জন্য মহা পরিচালকের পক্ষে মো: সাদ্দাম হোসের, সহকারী পরিচালক (পাসপোর্ট) এর ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখে স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। যার মাধ্যমে জানানো হয় যে ই-পাসপোর্টে নিম্নক্ত বিষয় গুলো সংশোধনী আনা হয়েছে যা ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখ থেকে কার্যকর হবে। সংশোধনী গুলো নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হল। 

স্বামী/স্ত্রীর নাম অপসারণ :

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখের পূর্বের ই-পাসপোর্ট গুলোতে Personal Data and Emergency Contact Page -এ Spouse Namer এর জায়গায় পুরুষ পাসপোর্ট ধারীর স্ত্রীর নাম এবং নারী পাসপোর্ট ধারীদের স্বামীর নাম উল্লেখ থাকত। কিন্তু ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখের পর থেকে Spouse Namer পরিবর্তে Local Guardian's Name আপশন চালু হয়েছে। তবে এ অংশটি কেবল দত্তক নেওয়া সন্তানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এবং এই অংশটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রমাণ স্বরূপ সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে Local Guardian's এর অনাপত্তি সনদ এবং Local Guardian's এর জতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্টের ডকস্ক্যান কপি সাবমিট করতে হবে। 

QR Code অপসারণ :

ই-পাসপোর্টের একটি অন্যতম ফিচার ছিল QR Code। যেটি স্ক্যান করলে খুব সহজেই পাসপোর্ট ধারীর নাম এবং যোগাযোগ নাম্বার পাওয়া যেত। কিউ আর কোডটি থাকত মূলত ই-পাসপোর্টের প্রথম পাতায় জরুরি তথ্যের নিচে। তবে নিরাপত্তার জন্য নতুন এই স্মারক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কিউঅর কোডটি অপসারণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। যার ফলে ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখের পর নতুন ই-পাসপোর্ট গুলোতে এই ফিচারটি আর যুক্ত থাকছে না। 

আরও পড়ুন : ডেলিভারি স্লিপ দিয়ে পাসপোর্ট চেক করুন 

অ্যাড্রেস অংশে নতুন লাইন সংযোজন : 

০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ইং তারিখের পর থেকে নতুন ই-পাসপোর্ট গুলোতে অ্যাড্রেস অংশে নতুন একটি ৪৮ ক্যারেক্টারের লাইন সংযোজন করা হয়ে। যা পূর্বে ছিল দুই টি লাইন এবং ক্যারেক্টার সংখ্যা ছিল ৯৬। নতুন লাইন সংযোগের পর বর্তমান লাইন সংখ্যা হচ্ছে ৩ টি এবং টোটাল ক্যারেক্টার সংখ্যা হচ্ছে ১৪৪। যার ফলে পূর্বে ব্যক্তিগত তথ্য ও জরুরী যোগাযোগ অংশে পাসপোর্টধারীর স্থায়ী ঠিকানা এবং জরুরী যোগাযোগের জন্য পাসপোর্টধারী ব্যক্তি কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তির সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব না হলেও বর্তমানে এই বিড়ম্বনাটি প্রায় সমাধান হয়েছে বললেই চলে। এবং এটি আবেদনকারীকেও আবেদন করার সময় স্বস্তি প্রদান করবে।

শেষ কথা : 

ই পাসপোর্ট বাংলাদেশ সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ই-পাসপোর্ট প্রদানকারী বিশ্বের ১২০ টি দেশের বাংলাদেশ একটি। এটি একদিকে যেমন এয়ারপোর্টে ঝামেলা মুক্ত ইমিগ্রেশ্ন নিশ্চিত করে তেমনি পাসপোর্ট ধারীর ব্যক্তিগত তথ্যেরও সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করে। আর এই আপগ্রডেশনেরই একটি অংশ হচ্ছে ই-পাসপোর্টের পরিবর্তন। আশা করা যায় ভবিষ্যতেও ই-পাসপোর্টের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এমন সব প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এবং ফিচার আনতে থাকবে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তর। সম্প্রতি কি কি পরিবর্তন করা হয়েছে ই পাসপোর্টে আশা করি তা নিয়ে আপনাদের একটি স্পষ্ট ধারনা দিতে সক্ষম হয়েছি। ই-পাসপোর্ট রিলেটেড এই রকম গুরুত্বপূর্ন সব আপডেট পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। 

Next Post