১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৪
ই-পাসপোর্ট হলো ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের সংক্ষিপ্ত রূপ। ২২ জানুয়ারী ২০২০ তারিখে পৃথিবীর ১১৯ তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করে। যা পাসপোর্ট হোল্ডারকে এমএরপি পাসপোর্টের চেয়ে অধিক অধুনিক এবং নিরাপদ পাসপোর্ট প্রদান করে। ই পাসপোর্ট মূলত সাধারণ এময়ারপি পাসপোর্টেরই আধুনিক ভার্সন। তাই সাধারণ পাসপোর্টের মতই ই-পাসপোর্ট করতেও প্রায় একই রকমের ব্যক্তিগত তথ্য এবং কাগজ পত্রের প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণ পাসপোর্টের তুলনায় ই পাসপোর্টের আবেদনের সুবিধা হলো এখনে প্রয়োজনীয় কাজপত্র গুলো আলাদা করে সত্যায়ন করার প্রয়োজন হয় না। এমনকি ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে আলাদা করে ছবি তোলার প্রয়োজন হয় না। পাসপোর্ট তৈরির অভিজ্ঞতাকে আরো উন্নত করার জন্য এই পোষ্টে আমরা ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে সেটি নিয়েই কথা বলব। চলুন তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনায় প্রবেশ করা যাক৷
আরও পড়ুন : ডেলিভারি স্লিপ দিয়ে ই-পাসপোর্ট চেক
১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে :
ই-পাসপোর্ট সাধারণত পাঁচ বছর এবং দশ বছর উভয় মেয়াদের হয়ে থাকে। আবেদনকারী তার প্রয়োজন অনুযায়ী ই পাসপোর্ট নির্বাচন করতে পারবেন। তবে আবেদনকারীর বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে কিংবা ৬৫ বছরের বেশি হলে তাকে ০৫ বছর মেয়াদি এবং ৪৮ পৃষ্ঠার ই পাসপোর্ট নিতে হবে। সাধারণত ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগবে তা নির্ভর করে আবেদনকারীর বয়স, পেশা ইত্যাদির উপর। নিচে ই-পাসপোর্ট করতে যা যা লাগে তার একটি তালিকা প্রদান করা হল :
NID কার্ড/জন্ম নিবন্ধন সনদ :
ই পাসপোর্টের জন্য NID কার্ড/জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। আপনার বয়স যদি ১৮ থেকে ২০ বছর মধ্যে হয় তাহলে ই-পাসপোর্টের আবেদনের জন্য আপনার NID কার্ডের কপি অথবা অনলাইন ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদের যে কোন একটি প্রয়োজন হবে। তবে আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলে আপনি আপনার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট করতে পারবেন। কিন্তু আপনার বয়স যদি ২০ বছরের উর্ধ্বে হয় তাহলে ই-পাসপোর্টের আবেদনের জন্য আপনার NID কার্ড থাকাটা অবশ্যই অবশ্যই বাধ্যতামূলক।
পিতামাতার NID কার্ড :
পিতামাতার NID কার্ডের ফটোকপি কেবলমাত্র অপ্রাপ্ত বয়স্ক আবেদনকারীদের জন্য প্রযোজ্য হবে। প্রাপ্ত বয়স্ক আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য যে ১৮ বছরের নিচে কোন আবেদনকারী অভিভাবকের জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যতিত ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
নাগরিকত্ব সনদ :
প্রাপ্ত বয়স্ক এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক উভয় প্রকার আবেনকারীর ক্ষেত্রেই ই-পাসপোর্ট করার জন্য নাগরিকত্ব সনদ প্রয়োজন হবে। আবেদনকারী যদি ইউনিয়নের বাসিন্দা হলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নিকট থেকে নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করবেন এবং পৌরসভার বাসিন্দা হলে পৌরসভা চেয়ারম্যানের নিকট থেকে নাগরিকত্ব সনদ সংগ্রহ করবেন। এই নাগরিকত্ব সনদ ই-পাস্পোর্ট করার জন্য অবশ্যই অবশ্যই লাগবে।
অনলাইন আবেদনের কপি:
ই পাসপোর্ট করার জন্য অবশ্যই আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এটি ই পাসপোর্ট করার প্রথম ধাপ। এই ধাপে ই পাসপোর্ট করতে https://www.epassport.gov.bd/ সাইট থেকে যথাযথ ভাবে আবেদন সম্পূর্ণ করার পর আবেদনের কপিটি অন্যন্য কাগজ পত্রের সাথে সাক্ষাতকারের দিন পাসপোর্ট আফিসে জমা দিতে হবে হবে। আপনি কিভাবে নিজে নিজেই ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করবেন তা জানতে চাইলে এই পোস্টটি দেখুন: অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম।
পাসপোর্ট ফি পরিশোধের রিসিট:
অনলাইনে ই-পাসপোর্টের আবেদন করা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে আপনাকে নির্ধারিত আবেদন ফি প্রদান করতে হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদন ফি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মাধ্যমেই পরিশোধ করা যায়। আপনি অফলাইনে সরকারি বা বেসরকারি যে কোন ব্যাংকে (যেসব ব্যাংক ই-পাসপোর্টের ফি গ্রহণ করে) এ চালানের মাধ্যমে আবেদন ফি প্রদান করতে পারবেন এবং অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে এ চালানের মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করতে পারবেন। তবে যেভাবেই আবেদন ফি পরিশোধ করেন না কেন ফি পরিশোধের কপি বা রিসিট অবশ্যই সংগ্রহ করে রাখতে হবে। যা পরবর্তীতে পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজন হবে।
মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে কিভাবে এ চালানের মাধ্যমে আবেদন ফি পরিশোধ করতে হয় তা না জানলে আমাদের এই পোস্টটি দেখতে পারেন : এ চালান দিয়ে ই পাসপোর্ট ফি জমা দেয়ার নিয়ম।
পেশার প্রমান পত্র :
ই-পাসপোর্ট করার জন্য আবেদনকারীর পেশার প্রমান পত্র থাকাটা জরুরি। ছাত্রদের ক্ষেত্রে পেশার প্রমান পত্র হিসাবে স্টুডেন্ট আইডি এবং চাকুরিজীবীদের জন্য চাকরির কার্ড ই-পাসপোর্ট করতে প্রয়োজন হবে। তবে পেশা হিসাবে কৃষক নির্বাচন করলে তার সাপেক্ষে কোন প্রমান পত্র পেশ করতে হবে না।
3R সাইজ ছবি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) :
আবেদনকারীর বয়স যদি ১৫ বছরের নিচে হয় তাহলে ই-পাসপোর্ট করতে 3R সাইজ ছবি দতকার হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আবেদনকারীর এবং তার পিতা মাতার সদ্য তোলা ল্যাব প্রিন্ট 3R সাইজ ছবি প্রয়োজন হতে পারে। তবে ছবি গুলো সত্যায়ন করার কোন প্রয়োজন হবে না।
NOC / GO :
এটি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমনের জন্য ই-পাসপোর্টের আবেদন করলে তাদের GO (Government Order) প্রয়োজন হবে। আবার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীগণ যদি ব্যক্তিগত ভ্রমণ বা প্রয়োজনের জন্য ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন তাহলে তাদের NOC (No Objection Certificate) প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুন : ই পাসপোর্ট হয়েছে কিনা চেক করার নিয়ম
শেষ কথা :
বর্তমান সময়ে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো এই ই পাসপোর্ট। ই পাসপোর্ট চালু হাওয়ার কারণে পাসপোর্ট করার ঝামেলা একেবারেই কমে গিয়েছে বললেই চলে। ই পাসপোর্ট চালু ফলে এখন না প্রয়োজন হচ্ছে কাগজ সত্যায়নের না লাগছে দালালের পিছনে ঘুরতে। এখন নিজের আবেদন নিজেই করা যাচ্ছে খুব সহজে। আর এই যুগান্তকারী পদক্ষেপে আমরা শরিক হতে পেরে নিজেদের গর্বিত মনে করছি। আমরা আমাদের এই ব্লগে প্রতিনিয়ত ই পাসপোর্ট সম্পর্কিত সকল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যার ধারাবাহিকতায় আমাদের এই পোস্ট। আশা করছি ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে তা আপনাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আর কিভাবে ই-পাসপোর্টের আবেদন করেন তার জন্য শুরুতে মেনশন করা আমাদের পোস্টটি দেখে নিতে পারেন।